জুলাই সনদ পাঠ্যবইয়ে থাকবে: ড. ইউনূস
- ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৪০
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষর করেন তারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
স্বাক্ষর শেষে দেওয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূস আজকে এই দিনটি মহান দিন উল্লেখ করে বলেন, 'এটার কথা চিন্তা করলে গা শিহরে ওঠে, এমন একটি দিন। সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় সেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে। ক্লাস রুমে আলোচনা হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে—কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বললো, আমরা কী চাই। তারা চেষ্টা করে দেখবে তাদের দেশে সেটা সম্ভব কি না। যে উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।'
এ সময় গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।'
'আমরা পুরোনো কথাবার্তা সব পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে নিয়ে আসলাম। আমাদের সংবিধানের পরিবর্তনের মধ্যে নিয়ে আসলাম। সরকার চালানোর ভেতরে নিয়ে আসলাম। অনেক বিষয় এসেছে এই পরিবর্তনের ভেতরে। এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সেই পথে অগ্রসর হবো। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম,' যোগ করেন তিনি।
এই দেশ তরুণদের দেশ, তারাই পথ দেখাবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এখানে ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক মানুষ হলো ২৭ বছরের নিচে। এটাই আমাদের সম্পদ। সারা দুনিয়া অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কখন আমরা তাদের সাহায্য করব এই তরুণদের পাঠিয়ে। কারণ সারা দুনিয়াতে তরুণদের অভাব। কোনো কোনো দেশে তরুণ নেই বলতে গেলে! কাজেই তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের কাছে এসেছে। আমাদের কাছে দরখাস্ত আসছে, আমাদের কাছে এত জন পাঠান। আমাদের কাছে যত পারেন পাঠান। এটা তো ২০২৫ সালের কথা, ২০২৬ সালে কী বলবে? ২০২৭ সালে কী বলবে? হাত জোড় করে করে আসবে। কারণ আমাদের তরুণরা ছাড়া পৃথিবীতে এত তরুণ দিতে পারে, এত তাজা শক্তি দিতে পারে, এত সৃজনশীল মানুষ দিতে পারে, এত বিশ্বস্ত মানুষ দিতে পারে—দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না।'
'কাজেই সেই দেশকে গঠন করার দায়িত্ব আগামী সরকারকে নিতে হবে। পরবর্তী সরকারগুলোকে নিতে হবে। সেটার জন্য প্রস্তুতি হচ্ছে আমাদের সনদ। এই সনদের মাধ্যমে আমরা আরেকটি বড় কাজ করলাম, আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন-কানুন ছিল না। মানুষ যা ইচ্ছা তা করতে পারতো। এখন আমরা সভ্যতায় আসলাম এবং এমন সভ্যতা আমরা গড়ে তুলব মানুষ ঈর্ষার চোখে আমাদের দেখবে। কাজেই সেটা সনদ পরবর্তী জীবন আমরা কীভাবে গঠন করব তার ওপর নির্ভর করবে,' যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের ভবিষ্যত অত্যন্ত চমৎকার। শুধু আমাদের সমাজটাকে গঠন করতে পারলেই হলো। আজকে বুঝতে পারলাম, আমরা যদি একমত হই, যেভাবে আমরা হতে পেরেছি, অন্য সব কাজে আমরা যদি একমত হই, এক পথে চলি, তাহলে আমাদের দেশ অনন্য দেশে পরিণত হবে।'
ঐকমত্যে পৌঁছাতে কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা তরুণদের জানাতে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'তারা যেন দেখে তাদের নেতারা তাদের বিষয়গুলো কীভাবে বিবেচনা করছেন। কীভাবে সিদ্ধান্তে আসছেন। তারা যেন অনুপ্রাণিত হয়। আজকে শুধু অনুষ্ঠান না, সারা জাতি এটা থেকে অনুপ্রাণিত হবে। নতুন পথের দিশা পাবে। আমরা ছোট জাতি না, কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকার জাতি না, আমরা কারও কথার তলে থাকি না, আমরা আমাদের মতো চলি, মাথা উঁচু করে চলি এবং সারা দুনিয়াতে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে।'