আবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ন্যানো স্যাটেলাইট স্বপ্ন এখন বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে

আবিপ্রবি শিক্ষার্থী
আবিপ্রবি শিক্ষার্থী © সংগৃহীত

দুই বছর আগে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (AUST) একদল শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেছিল, নিজস্ব ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর। উন্নত দেশগুলোর স্যাটেলাইটের যুগে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সাহসী এক সূচনা।

শুরুটা ছিল কঠিন। স্যাটেলাইট কম্পোনেন্টের উচ্চমূল্যের কারণে (প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২–৩ কোটি টাকা) ছাত্র পর্যায়ে এটি প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু অস্ট শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী চিন্তায় এগিয়ে আসে, কম খরচে নিজস্ব প্রযুক্তিতে কম্পোনেন্ট তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে। এই ভাবনা থেকেই ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও EEE বিভাগের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম Satellite Communication Lab, যা থেকে “AUSTSat Nano Satellite Mission Project Team”-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

বর্তমানে প্রকল্পটি চারটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে তারা 2U মেকানিক্যাল মডেল উপস্থাপন করে Bangladesh Satellite Company Limited (BSCL)-এর কাছে। এরপর ২০২৫ সালের জুনে উন্নত 3U Nano Satellite Drop & Communication Range Test Model তৈরি করে, যা সফলভাবে ২ অক্টোবর অন-সাইট টেস্ট সম্পন্ন করে।

আরও পড়ুন: সর্বনিম্ন রান তাড়ায় চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ পরাজয় বাংলাদেশের

দলের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে On-board Computer (OBC) তৈরি করা—যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা হলেও তাদের উৎপাদন খরচ মাত্র ২৫,০০০ টাকা। এটি এখন পর্যন্ত ৬টি ফাংশনাল টেস্টের মধ্যে ৪টি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে, এবং ভবিষ্যতে ১ লক্ষ টাকার নিচে উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই মডেলটি ৪০০ কিমি উচ্চতা থেকে ১০ মিটার GSD রেজোলিউশনে ছবি ও সেন্সর ডাটা পাঠাতে সক্ষম, যা শিক্ষার্থীদের তৈরি স্যাটেলাইটের জন্য এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

প্রকল্পটির অ্যাডভাইজর ড. ওমর ফারুক (বিশ্বের শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীর তালিকাভুক্ত) এবং প্রজেক্ট লিডার মো. আবদুল্লাহ আল নাঈম, যিনি এর আগে “তরী” ভাসমান বাড়ি প্রকল্পের উদ্যোক্তা ও বর্তমানে ACI AUST Student Chapter-এর প্রেসিডেন্ট।

বর্তমানে ১৮ জন শিক্ষার্থী এই প্রকল্পে যুক্ত, এবং তাদের দুটি গবেষণা প্রবন্ধ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ৬ অক্টোবর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট হস্তান্তর করে।

দলের বিশ্বাস—যথাযথ গবেষণা ও শিল্পখাতের সহায়তা পেলে, বাংলাদেশেই স্যাটেলাইটের কম্পোনেন্ট বিদেশি মূল্যের মাত্র ৫% ব্যয়ে তৈরি করা সম্ভব।