নিরপেক্ষ নির্বাচন না করলে তা বরদাশত করা হবে না: মির্জা ফখরুল 

মির্জা ফখরুল 
মির্জা ফখরুল  © টিডিসি

ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে সম্পন্ন করতে হবে বলে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, কোনে একটি বিশেষ দলের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করতে আমরা তা ‘বরদাশত’ করব না, আমরা তা মেনে নেব না, বিএনপি তা মেনে নেবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি পরিস্কারভাবে বলে দিতে চাই, এদেশে গণতন্ত্র, সংস্কার, আইনের শাসন, উন্নয়নসহ যা কিছু জনগণের জন্য কল্যাণকর, তা বিএনপির হাত দিয়ে এসেছে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার চলবে। কিন্তু সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করতে, ষড়যন্ত্র করতে চাইলে দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ ছাত্রদল নেতা নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। আলোচনার আয়োজন করে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন নব্বইয়ে ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ।

দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ নির্বাচন বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যতই সংস্কার করি, বুদ্ধিজীবী মিলে কৌশল আবিষ্কার করার চেষ্টা করি কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারব না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রের জন্য আর বিকল্প কোনো পথ নেই। মনে রাখতে হবে, কয়েকজন মিলে আইন করলে গণতন্ত্র হয় না।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে কাটানো সময়ে বছরে একটি মাস্টার্স করতে পারেন ঢাকার তরুণরা

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী। তারা বার বার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সেই লড়াইয়ে মানুষ বার বার হোঁচট খেয়েছে। যতবার হোঁচট খেয়েছে, ততবার উঠে দাঁড়িয়েছে এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিজয় অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, দানব হাসিনা দেশের সমস্ত কিছুকে তছনছ করে দিয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, আমাদের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা- সমস্ত জায়গায় সে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের সামনে কঠিন পথ। সেই পথকে মসৃন করতে আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের তৈরি করতে হবে।  
 
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু কিছু মানুষ বা সংগঠন জুলাই আন্দোলনকে নিজেদের আন্দোলন বলে দাবি করেন। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করেছে। বিগত টানা ১৭ বছর দেশে গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে, ফ্যাসিবাদের পতনে, মানুষের বাক স্বাধীনতা আদায়ে, সাধারণ মানুষ যাতে শান্তিতে নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুমাতে পারে; সেজন্য বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী জেল-জুলুম-নির্যাতন-অত্যাচার সহ্য করেছে। পরিবার হারা হয়েছে। অনেকে গুম হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে। তাই একথা আপনাদের পরিস্কারভাবে বলতে হবে-ফ্যাসিবাদের পতন হঠাৎ একদিনে আসে নাই। এই সফলতা আমাদের দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলনে জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফসল।

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দিলে ধানের শীষ প্রতীক বাতিল করতে হবে—সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারির এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ভাই আমরা তো তোমাদের মার্কাতে বাধা দেইনি। নির্বাচন কমিশন কোন মার্কা তোমাদের দেবে না দেবে, তা নির্বাচন কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে। অযথা বিএনপির ধানের শীষকে নিয়ে টানাটানি কেন? কারণ ধানের শীষ অপ্রতিরোধ্য। সারা দেশে ধানের শীষের স্লোগান উঠেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শুরুতে বিএনপি মহাসচিব এদেশের গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, ২৪এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।