চাকসু নির্বাচন

১৩ প্যানেলের মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে শিবির-ছাত্রদল

চাকসু নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
চাকসু নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা © টিডিসি ফটো

আসন্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র থেকে মোট ১৩টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। প্যানেল ছাড়াও তিনটি শীর্ষ পদসহ সম্পাদকীয় পদগুলো থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রচারণায় প্রার্থীরা ভিন্নধর্মী লিফলেট বিতরণে একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় এগিয়ে আছে ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল ও ছাত্রদল সমর্থিত সাজ্জাদ-শাফায়াত-তৌফিক পরিষদ। বাকিদের সেভাবে প্রচারণায় লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। 

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এর  কয়েকজন নেতাসহ স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন' প্যানেলও নিজেদের মতো প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছেন। এদের পাশাপাশি প্রচারণায় ভালো করছেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র মজলিসের সমন্বয়ে গঠিত 'সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ' ও পাহাড়ী এবং বামদের সমন্বয়ে গঠিত বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেল। এছাড়া এককভাবে বেশকিছু প্রার্থী প্রচারণায় চমক দেখাচ্ছেন। তবে, প্রচারণার পাঠে এগিয়ে শিবির-ছাত্রদলই।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪১৫ জন, হল ও একটি হোস্টেল সংসদে ৪৯৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪৮ জন নারী প্রার্থী ও ৩৬৭ জন পুরুষ প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৭জন। তার মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৬ হাজার ৮৪ জন এবং ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৪৩৪ জন। 

ইতোমধ্যে 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট' প্যানেল, ছাত্রদল, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, বাম সমর্থিত প্যানেলসহ বেশ কয়েকটি প্যানেল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ১২ মাসে ৩৩ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ইশতেহার দিয়েছে ছাত্রশিবির। অন্যদিকে ৮ দফা ও ৬৯টি সাব দফা নিয়ে ইশতেহার তুলে ধরেন ছাত্রদল। তাদের উভয়ের ইশতেহারেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সমস্যাগুলো উঠে এসেছে। তবে ভোটাররা বলছেন, প্যানেলগুলো বা প্রার্থীরা সাধ্যের বাইরেও ইশতেহার দিচ্ছেন। এখন নির্বাচিত হওয়ার পর তারা আমাদের জন্য কতটুকু কাজ করেন সেটাই দেখার অপেক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে এখন লিফলেট ও প্রচারণামূলক কর্মসূচির ছড়াছড়ি। প্যানেলের প্রার্থীরা নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছাচ্ছেন।

নির্বাচনে শিবির-ছাত্রদল এগিয়ে থাকার কারণ নিজেদের কর্মী সমর্থক। ছাত্রশিবির-ছাত্রদল তার নিজস্ব কর্মী দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া প্রায় প্রতিটি প্যানেলই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোরালোভাবে প্রচারণা চালাতে চেষ্টা করলে এক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে এই দুই প্যানেলই।

বাকিরা প্রচারণায় কেনো পিছিয়ে পড়ছেন জানতে চাইলে 'সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেলের জিএস প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আপনি যে দুটি প্যানেলের কথা বলেছেন তারা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিল। সেই অনুযায়ী তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে। বাকি অনেক প্যানেল কয়েকদিনের সিদ্ধান্তে হয়েছে, এজন্য তারা কাজ গোছাতে পারেনি। এছাড়া তারা বড় দুটি ছাত্রসংগঠন হওয়ায় আর্থিক সহযোগিতাও পাচ্ছেন এবং অনেক কর্মী সমর্থক রয়েছেন যা আমাদের নেই। এছাড়া আমরা আর্থিক সহযোগিতাও কোথাও থেকে পাচ্ছি না। সবমিলিয়ে আমরা প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ছি।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনে যারাই জয়ী হবেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করবেন না। চাকসুকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম হিসেবেই ব্যবহার করবেন এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করবেন। 

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে এবং ভোটের দিন বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা থাকবে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনে নিরাপত্তা জোরদার করবেন।

উল্লেখ্য, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চাকসু নির্বাচন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হবে ভোটগ্রহণ।