৪৯তম বিশেষ বিসিএস

‘সেইফ জোন’ নিশ্চিতে ১৫০-১৮০টি প্রশ্নের উত্তর করা উচিত

নাজমুল হক আকন্দ
নাজমুল হক আকন্দ © টিডিসি সম্পাদিত

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন যাঁরা দেখেন, তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ ৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষা-২০২৫। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের ৬৮৩টি শূন্য পদে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে গত ২১ জুলাই বিশেষ এই বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন । মোট ৩০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা যাবে এই বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে। ৩০০ নাম্বারের মধ্যে এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষায় ২০০ নম্বর। আর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষায় বসতে হবে প্রার্থীদের। এটি হবে ১০০ নম্বরের। 

প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করা লাখো তরুণ-তরুণীর মতো' ইসলামী শিক্ষা' বিষয়েও অসংখ্য শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। যারা ইসলামী শিক্ষা বিষয়কে নিয়েছেন জীবনের লক্ষ্য, তাদের জন্য এই মুহূর্তে কিছু বাস্তবসম্মত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো, যা প্রস্তুতিকে আরও কার্যকর, শাণিত ও ফলপ্রসূ করতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ!

সিলেবাসকেন্দ্রিক পড়ায় মনোযোগ দিন-

ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের বিসিএস প্রিলিমিনারি সিলেবাসটি অত্যন্ত নির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক। কুরআনের নির্দিষ্ট তিনটি সূরা, হাদীসের নির্দিষ্ট তিনটি অধ্যায়, সিরাতে রাসূল, মানব জীবনে ইসলামী শিক্ষা, ইসলামের বাস্তবিক প্রয়োগ ইত্যাদি টপিক পিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত সিলেবাসে রয়েছে। সিলেবাস সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা অত্যাবশ্যক। তাই শেষ সময়ে সিলেবাসটিকে একবার দেখে নিলে পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর করতে কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করি।

ইসলামী শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা পিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত সিলেবাস তাদের ছাত্রজীবনে অধ্যয়ন করেছেন। কাজেই আমার পরামর্শ থাকবে তারা তাদের পঠিত সেই সিলেবাসটিকে আরো একবার দেখে নিতে পারেন। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।

পূর্বের পড়া রিভিশন দিন-

৪৯তম বিসিএসকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত বই, গাইড, শীট ফলো করেছেন সেগুলো আবার রিভিশন দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঝালিয়ে নিন। ভালো করে রিভিশন না দিলে পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক আসার সম্ভাবনা থাকবে!

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সাল-তারিখগুলো আলাদাভাবে আয়ত্ত করুন-

ইসলামিক শিক্ষার সিলেবাসের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, ইসলামী অর্থনীতি, সিরাতে রাসূলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টপিক রয়েছে। এ সমস্ত টপিকগুলোতে প্রচুর ইনফরমেশন আছে। কাজেই শেষ সময়ে এগুলো ভালো করে রিভিশন না দিলে পরীক্ষায় ভুল উত্তর করার সম্ভাবনা থাকবে!

আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন-

যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি যদি হয় বিসিএস পরীক্ষা তাহলে তো কথাই নেই! পরীক্ষার সময় আত্মবিশ্বাসী থাকুন এবং পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হলেও ঘাবড়ে যাবেন না!

সময় ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হোন-

২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে ২ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ থাকে। তাই বাসায় বসে মক টেস্ট দিয়ে প্র্যাকটিস করুন—এতে সময় নিয়ন্ত্রণ ও চাপ সামলানো সহজ হবে!

পরীক্ষার দিন শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন-

ভালো ঘুম, হালকা খাবার, পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রস্তুতির চূড়ান্ত যাচাই সেরে রাখুন। ভিড় ও দেরি এড়াতে আগে ভাগে গুগল ম্যাপ থেকে কেন্দ্র চিনে নিন এবং যথাসময়ে কেন্দ্রে পৌঁছান।

সর্বোপরি, পরীক্ষার হলের দুই ঘণ্টা সময় আপনার ভবিষ্যতের অনেক কিছুই নির্ধারণ করবে। কাজেই এই দুই ঘণ্টা সময়কে আত্মবিশ্বাসের সাথে মূল্যায়ন করুন এবং পরীক্ষার হলে খুবই সতর্কতার সাথে উত্তর করুন। মনে রাখবেন পরীক্ষায় একটি নাম্বারও আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে!!

পরীক্ষায় প্রশ্ন পাবার পর প্রশ্নটি এক নজর দ্রুত দেখে নিন। প্রশ্নের মান (সহজ না কঠিন) অনুমান করে কাটমার্ক কত হতে পারে বা চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কত নাম্বার পেতে হবে সেটি ধারণা করে পরীক্ষায় প্রশ্ন দাগানোর চেষ্টা করবেন।

পরীক্ষার হল-এ একদম অজানা প্রশ্নগুলো এড়িয়ে চলুন। যেগুলো ফিফটি ফিফটি হবার সম্ভাবনা আছে সেগুলো অবশ্যই দাগাবেন! মনে রাখবেন কম দাগিয়ে রিস্ক নেওয়ার চেয়ে বেশি দাগিয়ে রিস্ক নেওয়া ঢের ভালো!

শেষ সময়ে করণীয় 

নতুন করে কোনো তথ্য উপাত্ত পড়ার প্রয়োজন নেই। ৪৯তম বিসিএস এর প্রস্তুতি হিসেবে যা যা পড়েছেন সেগুলো দ্রুত রিভিশন দিয়ে শেষ করুন। সেইফ জোনে থাকার জন্য ১৫০-১৮০টি প্রশ্নের উত্তর করা উচিত। তবে প্রশ্নের মানের উপর নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে মনে রাখতে হবে, ২০০টি প্রশ্ন ভালো করে পড়ে উত্তর করাও কিন্তু একটি যোগ্যতা। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, প্রশ্নের ৪টি অপশন ভালো করে না পড়ে কোনো অবস্থাতেই উত্তর করা যাবে না।

শেষ কথা

ইসলামী শিক্ষার একজন প্রার্থী হিসেবে আপনি শুধু একজন চাকরিপ্রার্থী নন—বরং আপনি হতে পারেন ইসলামের একজন বিশিষ্ট দ্বায়ী। ইসলামের সুমহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে সদকায়ে জারিয়ার আমলে শামিল হবার জন্য প্রস্তুত হোন! দোয়া রইল সবার জন্য।

লেখক: ৪০তম বিসিএস (শিক্ষা); প্রভাষক, ইসলামী শিক্ষা বিভাগ, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া