আলিয়া মাদ্রাসা
সরাসরি ভর্তি ৯ম শ্রেণিতে, ছাড় বয়সেও— কওমি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে পদচারণা বাড়বে?
- রায়হান উদ্দিন
- ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২:১১
সরাসরি ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, যেখানে রেজিস্ট্রেশনের বয়স নির্ধাণ করা হয়েছে ২০ বছর। শিক্ষায় সার্বজনীনতা, বিশেষ করে কওমি শিক্ষার্থীদের আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ দিতেই এ নিয়ম করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যার মাধ্যমে আদতে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলসহ উচ্চশিক্ষায় পদচারণা বাড়বে কওমি শিক্ষার্থীদের। এক্ষেত্রে দাখিল ও আলিম ডিগ্রির অর্জনের সেতু হিসেবে ব্যবহৃত হবে আলিয়া মাদ্রাসাগুলো। সংশ্লিষ্ট বোর্ড সূত্রও বিষয়টি জানিয়েছে। তারা বলছে, ২০১৪ সালের দিকেই হঠাৎই এসব সুযোগে কঠোরতা আরোপ করেছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার; যার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন কওমি শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী কোরআন শরিফ মুখস্ত বা হিফজ সম্পূর্ণ করতে বয়স প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর হয়ে যায়। তাদের অধিকাংশই কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করে থাকেন। কিতাব বিভাগে মোট ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। অর্থ্যাৎ হিফজ পড়া ও দাওরা হাদিস, ইফতা (ইসলামিক আইন) সম্পন্ন করতে একজন শিক্ষার্থীর ২০ থেকে ২২ বছর সময় লেগে যায়। মূলত এমন শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতেই সরাসরি ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বোর্ড সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৪ সাল থেকে আলিয়া মাদ্রাসায় কওমি শিক্ষার্থীদের সরাসরি ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় ৫ম ও ৮ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন থাকতে হতো। এতে তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় এ পদ্ধতি চালু হওয়ায় কওমি অঙ্গনের শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, কওমি শিক্ষার্থীদের বড় একটি আলিয়া মাদ্রাসা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান। কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে তা এত দিন বন্ধ ছিল। সে সুযোগ ফের তৈরি হওয়টা নিঃসন্দেহে কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের। এর মাধ্যমে কওমি শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বলেই মত এসব শিক্ষার্থীর।
রাজধানীর একটি কওমি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস, ইফতা করার পাশাপাশি দাখিল-আলিম শেষ করা এমনই একজন শিক্ষার্থী হাফেজ মাওলানা মুফতি তাওহীদুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্না করা এই যুবক বর্তমানে উত্তরার আন-নুহা শিশু একাডেমির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘পুনরায় আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার বা ভর্তির সুযোগ দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এতে আমাদের কওমি অঙ্গনের শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় নিজেদের মেলে ধরতে পারবে।’
এদিকে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দাখিল ৯ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করতে গত মাসের শেষ দিকে মাদ্রাসা বোর্ডের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়; যার আবেদন আজ (৫ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থীর বয়স ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি সর্বনিম্ন ১৪ বছর এবং সর্বোচ্চ ২০ বছর সেসব শিক্ষার্থী সরাসরি ৯ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পাবে। যেসব শিক্ষার্থী ৮ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পায়নি, সেব শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে মাদ্রাসা বোর্ডে আবেদন করে সরাসরি ৯ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পাবে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তিন ধরনের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতেই সরাসরি আলিয়া মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তারা হলো শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়া, স্কুল থেকে ৬ষ্ঠ/৭ম ও ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর যারা মাদ্রাসায় পড়তে চায় তাদের জন্য। এ ছাড়া হিফজ সম্পূর্ণ করা ও কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মাদরাসাতুল কোরআন, উত্তরার প্রিন্সিপাল মুফতি জাকারিয়া হারুন ২০১৪ সালে রাজধানীর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ও ২০১৬ সালে বারিধারা মাদ্রাসা ইফতা (ইসলামিক আইন), সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি গাজীপুরের রাউৎকোণা কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল-আলিম (২০১৪ ও ২০১৬ সাল) পাস করেন। পরে টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে অনার্স (২০২২) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স (২০২৪) সম্পন্ন করেন।
তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আলিয়া মাদ্রাসায় সরাসরি ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, তা অবশ্যই বিরাট একটা সুযোগ। এতে কওমি অঙ্গনের মেধাবীরা উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারবে এবং দেশ গঠনে তারাও ভূমিকা রাখতে পারবে। কারণ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যে কলাকৌশলে পড়াশোনা ও পরিশ্রমি হয়ে থাকেন, এতে তারা দাখিল-আলিম পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যেভাবে দাখিল-আলিম সম্পন্ন করা যায়, কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে সিলেবাস ঠিক রেখে যদি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি কাঠামোর আওতায় আসতে পারত এতে কওমি অঙ্গনের শিক্ষার্থীরাই বেশি উপকৃত হত এবং দেশ গঠনে তাদের কার্যত ভূমিকা রাখতে পারত।