আরব সাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব পাকিস্তানের, নেপথ্যে কী

পাক প্রধানমন্ত্রী, ট্রাম্প, আসিম মুনির
পাক প্রধানমন্ত্রী, ট্রাম্প, আসিম মুনির © সংগৃহীত ছবি

আরব সাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই উচ্চাভিলাষী বাণিজ্য ও কৌশলগত প্রকল্প নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের উপদেষ্টারা সম্প্রতি ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন আরব সাগরের উপকূলে একটি বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব নিয়ে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেলুচিস্তান প্রদেশের গোয়াদর জেলার পাশনি শহরে একটি নতুন বন্দর বা টার্মিনাল গড়ে তোলা হবে, যেখানে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারবে। বিশেষ করে, পাকিস্তানের ভূগর্ভস্থ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে মার্কিনদের অংশগ্রহণ চায় ইসলামাবাদ। এটি এমন এক সময়, যখন বিশ্বব্যাপী লিথিয়াম, কপার ও অন্যান্য রেয়ার আর্থ মিনারেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

পাশনি শহরটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে একদিকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) প্রকল্পের অংশ গোয়াদর বন্দর এবং অন্যদিকে ভারত মহাসাগরের প্রবেশদ্বার রয়েছে। পাশনিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC)-এর জবাবে একটি কৌশলগত পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন বেলুচিস্তানের খনিজ সম্পদের বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে, অন্যদিকে চীনের প্রভাবাধীন অঞ্চলে একটি বিকল্প উপস্থিতি গড়ে তুলতে পারবে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রয়েছে রাজনৈতিক জটিলতা, নিরাপত্তা ইস্যু এবং বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতার মতো বিষয়।

বর্তমানে গোয়াদর বন্দর পরিচালনা করছে চীনা কোম্পানি, যা বেইজিংয়ের "স্ট্রিং অব পার্লস" কৌশলের অংশ হিসেবে পরিচিত। সেই প্রেক্ষাপটে পাশনিতে একটি নতুন বন্দর তৈরি ও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা শুধু অর্থনৈতিক নয়, একটি ভিন্ন জিও-পলিটিকাল বার্তাও বহন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এখনও মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবের বিষয়ে মন্তব্য করা হয়নি। তবে এটি বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।