ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ধস, এখনও নিখোঁজ ৯১ শিক্ষার্থী

ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামি বোর্ডিং স্কুল ধসে নিখোঁজ ৯১ শিক্ষার্থী
ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামি বোর্ডিং স্কুল ধসে নিখোঁজ ৯১ শিক্ষার্থী © সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের সিদোয়ারজো শহরে একটি ইসলামি বোর্ডিং স্কুল ধসে পড়ার ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯১ শিক্ষার্থী ও কর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। 

সোমবার বিকেলে ‘আল খোজিনি’ বোর্ডিং স্কুলের নামাজঘরের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা নামাজে অংশ নেওয়ার সময় ওপরের নির্মাণাধীন তলা ধসে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার একদিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো শতাধিক স্বজন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া সন্তানদের খোঁজে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। স্কুলটিতে থাকা ৯৯ জন শিশু ও কর্মীকে শনাক্ত করা সম্ভব হলেও নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় উদ্ধার সংস্থার প্রধান নানাং সিগিত জানান, ধ্বংসস্তূপে ক্যামেরা প্রবেশ করিয়ে ছয়জন জীবিত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তারা আলো দেখে পা নাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তবে পুরো কাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। একটি এক্সক্যাভেটর ও একটি ক্রেন প্রস্তুত থাকলেও মূলত হাতে হাতে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন কর্মীরা।

স্বজনদের আহাজারিতে ঘটনাস্থলে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নিখোঁজ শিক্ষার্থী রোসি’র চাচা হোলি আবদুল্লাহ আরিফ বলেন, “আমি চারপাশে ছুটে চিৎকার করছিলাম, ‘রোসি! রোসি! যদি শুনতে পাও, বের হয়ে এসো।’ তখন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক শিশুর চিৎকার শুনি—সে বলছিল ‘আল্লাহ, না, আমাকে বাঁচাও!’ আমি ভেবেছিলাম ও রোসি।”

ভবন ধসের কারণ হিসেবে দুর্বল ভিত্তি স্তম্ভকে দায়ী করেছে ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (BNBP)। সংস্থার মুখপাত্র আবদুল মুহারি জানান, ভবনের চতুর্থ তলায় নির্মাণ কাজ চলছিল, যা নিচের স্তম্ভ ধারণ করতে পারেনি। এতে করে পুরো ভবন ধসে পড়ে। তিনি ভবন নির্মাণে কঠোর নিরাপত্তা মান বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ভবনের ব্যবস্থাপকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, আল খোজিনি স্কুলের ভবনটির ওপরতলার নির্মাণকাজ চলছিল গত নয় মাস ধরে। এর আগেও ইন্দোনেশিয়ায় এমন দুর্ঘটনার নজির রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই পশ্চিম জাভায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ভবন ধসে পড়ে তিনজন নিহত হন। ২০১৮ সালে সিরেবনে সংগীতচর্চা চলাকালীন সাত কিশোর নিহত হন। একই বছরে জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের একটি মেজানাইন ফ্লোর ধসে পড়ে আহত হন অন্তত ৭৫ জন।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিখোঁজ ৯১ জনকে উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের দ্বিতীয় দিনের মতো তৎপরতা চলছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্ক, কান্না ও হতাশায় মুহ্যমান স্বজনেরা আশায় বুক বেঁধে প্রিয়জনদের জীবিত উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছেন।