জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার
মিয়ানমারের ভেতরে সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গা দুর্দশা শেষ হবে না
- টিডিসি রিপোর্ট
- ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৮
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। দীর্ঘস্থায়ী এই সংকটের সমাধান সেখানেই নিহিত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সাধারণ পরিষদের সভাপতি অ্যানালেনা বেয়ারবককে সম্বোধন করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই সংকট মিয়ানমারে শুরু হয়েছে, এবং ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট, সমাধানও সেখানেই রয়েছে।’
আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অমানবিক সহিংসতার কারণে সাড়ে সাত লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘অন্যরা রাখাইন রাজ্যে বিতাড়িত অবস্থায় রয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে আরাকান আর্মি ওই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করলেও রোহিঙ্গাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং তারা গ্রেপ্তার ও আটক আতঙ্কে বসবাস করে। একই সাথে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষায় প্রবেশে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে না। তাদের জোরপূর্বক শ্রম এবং নিয়োগের শিকার হতে হয়। জীবন প্রতিদিন বর্ণবাদ ও ভয়ের মধ্যে পার হয়ে যায়।
এ সময় প্রায় ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া এবং ২০২৪ সালে পুনরায় সংঘর্ষের পর আরো দেড় লক্ষ শরণার্থীকে গ্রহণ করায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন গ্রান্ডি। তিনি বলেন, বিশাল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে, যা বিশ্বে অনন্য নজির উপস্থাপন করেছে। তারা আমাদের দেখাচ্ছে যে, যখন উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, তখনও সহানুভূতি সম্ভব। শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচানো যায়।
একই সাথে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ায় বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ (এডিবি) আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করেন গ্রান্ডি। তবে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা পর্যাপ্ত সমর্থন পাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সতর্ক করে বলেন, আরো বেশি সহায়তা না পেলে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে শিশুমৃত্যু এবং আরো শরণার্থী বিপজ্জনক নৌযাত্রায় প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিতে বাধ্য হবে।
এ সময় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, পুনর্বাসন সুযোগ, শিক্ষা ও শ্রমের সুযোগ সৃষ্টিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান। বলেন, যখন একটি জাতি দিনদিন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা চুপ থেকে কোনো সমাধান আশা করতে পারি না।