হাসপাতালের বিছানায় সাবেক মন্ত্রীর ছবি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল কারা কর্তৃপক্ষ
- ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৪
সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের মৃত্যুর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হ্যান্ডকাপ পড়া একটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। তবে ছবিটি বিভ্রান্তিকর ও সম্পূর্ণ অসত্য বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জেল কর্তৃপক্ষ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ছবিটি কোনোভাবেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থার নয়। মৃত একজন ব্যক্তিকে ঘিরে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো দায়িত্বহীনতা ও অনৈতিকতার শামিল বলে উল্লেখ করে তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন অসুস্থ অবস্থায় কারাবন্দি থাকাকালে একাধিকবার যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বাংলাদেশ জেল কর্তৃপক্ষ পুনরায় নিশ্চিত করেছে, প্রত্যেক বন্দির মানবিক মর্যাদা রক্ষায় তারা সর্বদা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকে এবং সাবেক এই মন্ত্রীর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ‘আনকন্ট্রোলড বাওয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ সমস্যায় ভুগছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে অসুস্থ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন রবিবার বিকেলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
সাবেক এই মন্ত্রীর শয্যায় শুয়ে থাকা, হাতে হাতকড়া পরা অবস্থায় একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, পেছনের ৩২ নম্বর বেডে কালো টি-শার্ট পরা এক রোগী রয়েছেন। তার নাম মিজান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই বেডে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মিজানের স্বজনরা জানিয়েছেন, রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তাদের সামনের বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী হুমায়ূন। পরদিন তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর তার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না বলে জানান।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের মধ্যে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, আক্রমণ ও হত্যার অভিযোগে একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থেকে সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে একাধিকবার আদালত ও হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এ সময় তাকে হাতকড়া পরানো হয়।
তার বিরুদ্ধে ঢাকায় চারটি এবং নরসিংদীতে একটি হত্যা মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। তিনি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। বর্তমানে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা রয়েছে।