মানহীন ৬ সরকারি মেডিকেল নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী সপ্তাহে

৬ মেডিকেল কলেজের লোগো
৬ মেডিকেল কলেজের লোগো © টিডিসি সম্পাদিত

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক বিবেচনা ও পরিকল্পনা-প্রস্তুতি ছাড়া অনুমোদিত ছয় মেডিকেল কলেজ বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মেডিকেল বন্ধে অনীহা থাকলেও ‘নিতান্ত অপারগ’ হলে এর কয়েকটির বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। ইতিমধ্যে ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে মেডিকেলগুলোর প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ আমলের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি ও আমলা কোনো পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছাড়াই নেত্রকোণা, চাঁদপুর, নওগাঁ, নীলফামারি, মাগুরা ও হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অনুমোদন নিয়েছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত হলেও কোনোটির স্থায়ী ক্যাম্পাস বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল ও গবেষণাগার নেই। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে না মানসম্মত চিকিৎসকও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬ মেডিকেল কলেজের মধ্যে ২০১৫ সালে প্রশাসনিক অনুমোদন পায় হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ। ক্লাস নেওয়ার জন্য স্থান না পাওয়ায় তখন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনুমোদন পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তবে তা চলছে সদর আধুনিক হাসপাতালে। শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির ২য় ও ৩য় তলাকে নির্বাচন করা হয়েছে। হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের পাশে সদর উপজেলায় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।

অপর ৫টি মেডিকেল কলেজ ২০১৮ সালে অনুমোদন পায় এবং পরবর্তী বছরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে নেত্রকোণা মেডিকেলের ক্লাস চলছে সদর হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষে। ৮ বছরেও নিজস্ব কোনো ভবন হয়নি কলেজটির। এরই মধ্যে গত বছর ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭০ করা হয়েছে এর আসন সংখ্যা। এ ছাড়া কলেজের রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার কেউ নেই। একই সাথে রয়েছে শিক্ষক সংকটও। ক্লাস চলছে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে। এ ছাড়া কলেজের গবেষণাগারে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় বইয়ের ওপরই নির্ভরশীলতা থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।

এদিকে চাঁদপুর মেডিকেলের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি এখনও। সদর হাসপাতালের মাত্র আটটি কক্ষেই চলছে এই কলেজ। স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের জায়গার সংকুলান হয় না। এক ব্যাচের ক্লাস চলাকালীন অন্য ব্যাচকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কলেজটির কোনো নিজস্ব হোস্টেলও নেই। একটি ভাড়া ভবনে করা হয়েছে আবাসনের ব্যবস্থা। প্রায় একই অবস্থা নওগাঁ, নীলফামারী ও মাগুরা মেডিকেল কলেজেরও।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বন্ধ হয়ে যাবে, এরকম অনেক আলোচনা চলছে। তবে আমরা চাই না কোনো মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে। নিতান্ত অপারগ না হলে বন্ধ করব না। বন্ধ করা তো আমাদের কাজ না। আমাদের কাজ হচ্ছে, শিক্ষার মান, মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া, শিক্ষার উন্নতি করা। এখন কেউ যদি একান্ত সহযোগিতা না করে, সেক্ষেত্রে বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, যেসব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নিয়ে প্রশ্ন আছে, সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। এসব মেডিকেলের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আমরা ম্যাট্রিক্স সিস্টেমে মেডিকেলগুলো স্কোর করছি। আগে ভালো নাকি ভালো না, এমন রিপোর্ট করা হত। এখন পয়েন্ট করে স্কোর করা হচ্ছে। এতে আমরা কম্পেয়ার করতে পারব কোন মেডিকেলের অবস্থান কোথায়।

বন্ধের সিদ্ধান্ত না হলে মেডিকেল কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা মেডিকেল কলেজগুলোর উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ঢামেকের জন্য প্রায় ১২০০ কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যান নেওয়া হয়েছে। একই সাথে সারাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোর জন্য ১৯টি হোস্টেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য সব মেডিকেল কলেজের উন্নয়ন। বিশেষ করে পুরাতন আটটা এবং সর্বশেষ ছয়টি মেডিকেল কলেজকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।