অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে কলেজ থেকে বের করার ভিডিও ভাইরাল
- ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৪
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভূটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধেরুয়া কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন একাধিক ব্যক্তির সহায়তায় অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদকে কলেজ থেকে বের করে দিচ্ছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ভূটিয়ারকোনা কলেজের সামনে ও স্থানীয় বাজার এলাকায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। বক্তারা অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগ থেকেই তাঁর সঙ্গে কলেজের গণিত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ধর্মের শিক্ষক সাজেদুল ইসলাম, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম রতন এবং আনোয়ার হোসেনের বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলছিল। ওই বছরের আগস্টের পর বিরোধ আরও তীব্র হয় এবং তারা তাঁর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে বহিষ্কারের হুমকি দেয় এবং একাধিকবার বহিরাগতদের এনে তাঁকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন: কলেজছাত্রী ও তার বাবাকে মারধর, ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার
তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে আমাকে জোরপূর্বক ধাক্কাতে ধাক্কাতে কলেজ চত্বর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেছি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদের অপসারণ দাবিতে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের একটি অংশ। পরে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় ধর্মীয় শিক্ষক সাজেদুল ইসলামকে। এতে এলাকায় দ্বিমুখী বিভক্তি তৈরি হয়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাজেদুল ইসলাম জানান, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে ইউএনও আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। তবে রাজনৈতিক চাপে পুনরায় গোলাম মোহাম্মদকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদের দায়ের করা অভিযোগে আনোয়ার হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা চলছে।’
শুক্রবারের প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সুজিত কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা লজ্জিত। একজন শিক্ষকের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি, অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন মাস্টারসহ জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করুন।’
এছাড়া প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান, স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আবদুর রশিদসহ আরও অনেকে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কীভাবে স্কুল চলাকালে এমন ঘটনায় জড়ালেন, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া আমীন বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’