খাগড়াছড়িতে কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধের ঘোষণা
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৮
পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি। ন্যায়বিচারের দাবিতে হাজারো শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি জনগণ আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের চেঙ্গী স্কয়ারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেয় পাহাড়ি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্থানীয়রা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুরে কলেজ মাঠ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া, নারিকেলবাগান, শাপলা চত্বর, আদালত সড়কসহ প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার চেঙ্গী স্কয়ারে এসে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে আগামীকাল শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র শিক্ষার্থী উক্যেনু মারমা, শিক্ষার্থী কৃপায়ন ত্রিপুরা, কবিতা চাকমা, আকাশ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধি ওয়াইপাই মারমা, মংসাই মারমা, অংসুই মারমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ পাহাড়-সমতল সব জায়গায় নারীরা নিরাপদ নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধা—কেউই রেহাই পাচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো বিচারহীনতার সংস্কৃতি। প্রশাসন যদি কঠোর হতো, যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে বারবার এমন বর্বরতা ঘটত না।’
তারা আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার দুই আসামির একজনকেও এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত ২৭ জুন খাগড়াছড়ি সদরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল এক শিক্ষার্থী। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দুই আসামিই ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলেই পাহাড়ে এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটছে।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে যেত এবং রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরত। মঙ্গলবারও সে পড়তে গিয়েছিল। কিন্তু রাত ৯টার পরও না ফেরায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় গিয়ে জানতে পারি, সময়মতোই ছুটি দেওয়া হয়েছে। পরে প্রতিবেশীদের নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। অবশেষে রাত ১১টার দিকে একটি ফসলের খেতে অচেতন অবস্থায় মেয়েকে পাই।’
পরে তারা তাকে দ্রুত খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সে সেখানে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে সমাবেশে জুম্ম ছাত্র-জনতার আহ্বায়ক উক্যনু মারমা অভিযোগ করেন, গতকাল রাত আটটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে। ‘জনগণের প্রতিরোধের কারণে পরে তারা আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়,’ দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে হবে অবিলম্বে। তা না হলে আগামীকাল শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ করা হবে। তবে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ওই দিনের পর কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। এর মধ্যেও যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’