কলেজছাত্রীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ‘গণধর্ষণের পর ঢাবি ছাত্রীকে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা’ বলে প্রচার
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৯
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকায় ১৩ সেপ্টেম্বর জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধের জেরে নওরীন সুলতানা নামে এক তরুণীর ওপর হামলার ঘটনা।
আজ শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ পুলিশের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, চট্টগ্রামের একটি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় নওরীন ও তার পরিবারের সদস্যরা আহত হন এবং মামলাও দায়ের হয়। পুলিশের তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ ঘটনার সঙ্গে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ফেলে রাখার দাবিটি সত্য নয়।
এর আগে ফেক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ এ ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে চট্টলচিত্র নামের একটি ওয়েবসাইটে নওরীনের আহত হওয়ার ছবিটি পাওয়া যায়। এই ছবিটিই রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়ার দাবিতে প্রচার হচ্ছে। ওয়েবসাইটটিতে গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নওরীনের ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: অভিজ্ঞতা ছাড়াই ৫ লাখ টাকা আয়—ড. ইউনুসের ছবি দিয়ে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া
এতে বলা হয়, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ৪নং ওয়ার্ডে নওরিন সুলতানা (২৪) ও তার পরিবারের ওপর নৃশংস সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় নওরিন, তার মা ও ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। নওরিন সুলতানা কাপাসগোল সিটি কর্পোরেশন মহিলা কলেজের বিবিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) চান্দগাঁও থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়।
পরবর্তীতে আরও খুঁজে ফেসবুকে আয়দা নূরা (Aydaa Nora) নামের একটি অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টে গণধর্ষণের দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পাওয়া যায়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) পোস্টটি দেওয়া হয়।
এতে ঘটনাটির বিস্তারিত তুলে ধরে উল্লেখ করা হয়, ‘গতকাল (১৩/০৯/২৫) সন্ধ্যা সাতটার সময় আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার নিজ আপন মামা এবং কিছু কাজিনদের সাথে নিয়ে হুট করে অতর্কিত হামলা চালায়, আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। গতকাল সন্ধ্যায় হামলা করার আগের রাতেও (১২/০৯/২৫ তারিখ রাত ১১ টার দিকে) আমাকে চুল ধরে টানাটানি করে মারছিল। যার কারণে সেদিন রাতেই আমি থানায় অভিযোগ করেছিলাম নিরাপত্তাহীনতার জন্য। দুপুরে পুলিশ এসে ঘটনা তদন্ত করার কথা থাকলেও আসেনি। সেই রাত পার হয়ে এবং গতকাল দিন পার হয়ে সন্ধ্যা সাতটায় আমার মামা কিছু দল গঠন করে সন্ধ্যায় আমার উপর হামলা চালায়। আমি কেন জিডি করছি, আমাকে এই বাড়িতে আর থাকতে দিবে না। মারতে মারতে মারি ফেলবে, তারপরেও জিডি বা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারব না। নিলেই মেরে ফেলবে আমাকে এসব হুমকি দেয়। আমি এসব হুমকি তোয়াক্কা না করলে তখনই আমাকে খুন করে মেরে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা শুরু করে। মাঝখান দিয়ে লোডশেডিংয়ের অন্ধকারের সুযোগে সাথে সাথে দুই সেকেন্ড না হতেই কোথায় থেকে ইট মেরে আমার মাথায় কেমন জখম করছে ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন।’
পরে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় দায়ের করা এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইমামুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, নওরীনের ঘটনাটি সম্পত্তি দখল নিয়ে পারিবারিক কলহের ঘটনা। এর সঙ্গে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন দাবি গুজব।
তিনি আরও জানান, নওরীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। তিনি চট্টগ্রামের একটি কলেজের শিক্ষার্থী।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ ঢাবি শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের পর রাস্তার পাশে ফেলে রাখার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করছে।