রাকসু নির্বাচন: ভোটের তারিখ পিছিয়েছে তিনবার, নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম সব মিলিয়ে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে চারবার, পরিবর্তন করা হয়েছে তিনবার এবং তফসিল পুনর্বিন্যাস হয়েছে সাতবার। কখনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন, কখনো-বা ছাত্রদলের কর্মসূচি দিয়েছে বাগড়া। সর্বশেষ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তিতে পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ফলে আবারও পরিবর্তিত হয় রাকসু নির্বাচনের তারিখ।

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচনের মাত্র পাঁচদিন আগে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। এতে লাঞ্ছিতের শিকার হন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামসহ অনেকে। এর প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। আর শিক্ষকরা শুরু করেন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি। যার প্রতিঘাত আছড়ে পড়ে বারবার পেছানো সেই রাকসু নির্বাচনের ওপরই। চতুর্থবারের মতো এবারের রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পিছিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নেওয়া হয় ১৬ অক্টোবর।

এদিকে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দাবি পূরণে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাডটাউন’ স্থগিত করেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মসূচি স্থগিত করলেও বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা এখনো বন্ধ রেখেছেন।

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম গতকাল (২৪ সেপ্টেম্বর) এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা এখনো আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করিনি। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

ছাত্রশিবিরসহ নির্বাচনে অংশ নেওয়া কয়েকটি প্যানেল ভোটগ্রহণ পেছানোর প্রতিবাদ জানালেও উচ্ছ্বসিত ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেল। এমন পরিস্থিতিতে চতুর্থবারের মতো পেছানো ভোটগ্রহণ ১৬ অক্টোবর আদৌ হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

এখন পর্যন্ত কয়েকবার তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষে যে তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে, এর কারণ নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা। পরিবেশ বিনষ্টের কারণ শিক্ষার্থীরাও। তবে যাহোক না কেন, নৌকা তীরে এসে ডুববে না—অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার 

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মীমাংসিত পোষ্য কোটাকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বানচাল করার জন্য আগে থেকেই বিভিন্ন ইস্যু সামনে নিয়ে এসেছে।

ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, নির্বাচনি আমেজের ভেতর পোষ্য কোটাকে বারবার ফেরত আনার আন্দোলন হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা রাকসু বানচালেরও একটি পা‌ঁয়তারা দেখেছি। সাত মাস আগে বাতিল হওয়া কোটা ফেরত আসা অবশ্যই পরিকল্পিত।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল মনে করেন, পরিস্থিতি জটিল করে একপক্ষ এককভাবে রাকসুর দখল নিতে চায় এবং আরেকপক্ষ রাকসুকে বানচাল করতে চায়। এইসব পরিস্থিতি রাকসুর স্বার্থে নয়, বরং রাজনৈতিক স্বার্থে ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে। 

সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আগে এটার সুরাহা হওয়া উচিত। অন্যথা, নির্বাচনের পরবর্তী তারিখের আগে আবারও আন্দোলন করা হবে। এ পরিস্থিতি ইচ্ছা করেই সৃষ্টি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রাকসুর সাথে রাবিতে ৭ দিনের শাটডাউনও স্থগিত

একই ধরনের মত আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দীন আম্মারের। তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক একটা রাকসু আমরা সবাই চাই। তবে আমার মনে হয়, যে সংকটের কারণে এসব হয়েছে, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকদের কর্মসূচির কারণেই ভোটগ্রহণ পেছানোর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকরা বলছেন, রাকসুর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। 

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম বলেন, আমাদের একটা দাবি প্রশাসনের কাছে ছিল, সেটা মেনে নেওয়ার পর আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহারও করে নিয়েছিলাম। তবে উপ-উপাচার্যের ওপর হামলার ঘটনার কারণে আমাদের ফের কর্মসূচিতে যেতে হয়েছে।

শিক্ষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া জামায়াতপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। কিন্তু এখনো আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এতে আমাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছিল। এজন্যই আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কয়েকবার তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষে যে তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে, এর কারণ নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা। পরিবেশ বিনষ্টের কারণ শিক্ষার্থীরাও। তবে যাহোক না কেন, নৌকা তীরে এসে ডুববে না। রাকসু নির্বাচন অবশ্যই হবে। আগামী ১৬ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।