৭০% প্রণোদনা পাচ্ছেন বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকরা, যুক্ত হচ্ছেন সরকারি ট্রেইনিরাও
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:০৪
মেডিকেল কলেজের বেসিক ৮টি সাবজেক্টের শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হারে প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার। আগামীতে মূল বেতনের ৭০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পেতে যাচ্ছেন এসব শিক্ষক। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। একই সাথে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) অধীনে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন কোর্সে বেসিক সাবজেক্টে অধ্যয়নরত সরকারি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্যও নির্ধারিত হারে পারিতোষিক দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে অধিদপ্তর থেকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এতে সম্মতি জানালেও মন্ত্রণালয়গুলোর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রস্তাবটি।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেডিকেলের ৮ বেসিক সাবজেক্টের চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস বা স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষকতার বিকল্প কিছু করার সুযোগ না থাকায় এসব বিষয়ে অধ্যয়ন করতে চান না চিকিৎসকরা। এতে এ ৮ বিষয়ে তীব্র শিক্ষক সংকটে ভুগছে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের ৩৭টি মেডিকেল কলেজে কিউরেটর ও লেকচারারসহ বেসিক সাবজেক্টের ২ হাজার ১৫৫টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৬২৪ জন। পদ শূন্য আছে ৫৩১টি, যা মোট পদের প্রায় ২৫ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেসিক সাবজেক্টের এই শিক্ষক সংকট নিরসনে ২০১৯ সাল থেকে গ্রেডভিত্তিক নির্ধারিত হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যাথলজি বিষয়ের শিক্ষকরা এ ভাতা পেয়ে আসছেন। গ্রেডভিত্তিক এ প্রণোদনা পদ্ধতি অনুযায়ী, নবম গ্রেডে কর্মরত শিক্ষকরা ১০ হাজার, অষ্টম গ্রেডে ১১ হাজার, সপ্তম গ্রেডে ১৩ হাজার, ষষ্ঠ গ্রেডে ১৫ হাজার, পঞ্চম গ্রেডে ১৬ হাজার, চতুর্থ গ্রেডে ১৮ হাজার এবং তৃতীয় গ্রেডের শিক্ষকরা ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা পান। পরবর্তীতে অ্যানেস্থেসিওলজি ও ভাইরোলজি বিষয়ের শিক্ষকরাও এ প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যদিও এ দুটি বেসিক সাবজেক্ট হিসেবে বিবেচিত হয় না। তবে এ দুটি বিষয়ের চিকিৎসকদেরও স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার সুযোগ সীমিত।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত হারের পরিবর্তে বেসিক বিষয়ের শিক্ষকদের বেতনের শতভাগ প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও এটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আটকে যায় এ উদ্যোগ। গত জুলাই মাসে ৫০ শতাংশ হারে প্রণোদনার অনুমতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময় অর্থ বিভাগ জানায়, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এত বড় হারে প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব নয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৭০ শতাংশ প্রণোদনা অনুমোদন হয়েছে।
অপরদিকে দীর্ঘদিন থেকে বিএমইউ অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের বেসরকারি রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি প্রশিক্ষণার্থীরা প্রণোদনা পেয়ে আসছেন। বর্তমানে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা হারে প্রণোদনা পাচ্ছেন তারা। তবে সরকারি প্রার্থীদের জন্য প্রণোদনার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সরকারি চাকরিরত চিকিৎসকরা অন্যান্য বিষয়ে অধ্যয়ন করলেও বেসিক সাবজেক্টে পড়ার জন্য আগ্রহ পান না। নিতান্ত অপারগ না হলে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চান না চিকিৎসকরা। এবার প্রণোদনার ব্যবস্থা হলে চিত্র কিছুটা বদলাতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রণোদনার প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসিক সাবজেক্টের জন্য আমরা মূল বেতনের শতভাগ প্রণোদনার প্রস্তাব করেছিলাম। সরকারের আর্থিক অবস্থার কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় এতে আপত্তি জানায়। উনারা প্রস্তাব করেছিলেন ৫০ শতাংশ। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও কিছু বাড়ানোর জন্য তাদেরকে জানানো হয়। এখন এটা ৭০ শতাংশে নির্ধারিত হয়েছে। শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন আকারে আসবে।
তিনি বলেন, একই সাথে বেসিক সাবজেক্টের বিভিন্ন বিষয়ে যারা অধ্যয়ন করবেন, অধ্যয়নকালীন সরকারি প্রার্থীদের জন্য মাসিক ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। প্রস্তাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্মত হয়েছে। কিছু সংশোধন করতে বলা হয়েছে, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। এটা হয়ে গেলে আমাদের সরকারি প্রার্থীরা বেতনের পাশাপাশি প্রণোদনা পাবেন। আমরা আশা করছি, এটা হলে বেসিক সাবজেক্টে পড়ার আগ্রহ বাড়বে।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা সরকারি প্রার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ নিচ্ছি, কারণ বেসিক সাবজেক্টে অনেকে পড়তে চান না। তারা চিন্তা করেন যে এ বিষয়ে আমার প্র্যাকটিস করা হবে না, কেন যাব? তবে এতে যেন তারা উৎসাহিত হয়, এ কারণে আমাদের উদ্যোগ নেওয়া। বেসরকারি প্রার্থীদের সমান না হলেও কিছুটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা মাসে ২০ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ব্যাপার আছে।