নেত্রকোনায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষের রাজকীয় বিদায়
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫২
নেত্রকোনার কেন্দুয়ার ঐতিহ্যবাহী ভরাপাড়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবু সাদেককে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা রাজকীয় বিদায় জানিয়েছেন। দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক আবেগঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে বিদায় জানানো হয়।
মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অনেকেই। সবাই অকপটে স্বীকার করেন—তিনি ছিলেন শিক্ষক সমাজের পথপ্রদর্শক, একজন আদর্শিক অভিভাবক।
মাওলানা আবু সাদেক ১৯৮৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভরাপাড়া কামিল মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০২ সালের ১ জুন তিনি উপাধ্যক্ষ এবং ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালনের ৩৬ বছরজুড়ে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে মির্জা ফখরুলকে সুরক্ষা দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন সাবেক শিবির নেতা
বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তিনি ছিলেন আলোর পথপ্রদর্শক ও আদর্শ শিক্ষক। সততা, ত্যাগ আর নেতৃত্বে তিনি আমাদের চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’
মাদ্রাসার বর্তমান উপাধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হুজুর শুধু সহকর্মী নন, তিনি আমাদের অভিভাবক। তাঁর নেতৃত্বে পাঠদান, শৃঙ্খলা ও শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। তাঁর শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়।’
অনুষ্ঠান শেষে ফুলে সাজানো ছাদখোলা গাড়িতে করে শতাধিক মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রায় তাকে বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই অনন্য আয়োজনকে ঘিরে পুরো এলাকায় এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অধ্যক্ষ মাওলানা আবু সাদেক ১৯৬৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম হাজী আদম আলী এবং মাতা মরহুমা আয়েশা খাতুন।
তিনি মনকান্দা এম ইউ আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম, ভরাপাড়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল এবং মুক্তাগাছা আব্বাসিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৮ সালে কামিল পাস করেন। আলিয়া ধারার পাশাপাশি কওমি শিক্ষায়ও তিনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। সাতবারুকা, সোহাগী, ইসলামপুর ও সিলেটের রেঙ্গা মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।
বিদায় অনুষ্ঠানে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে স্মৃতিচারণ করেন তিনি। বক্তব্যে বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও সহকর্মীদের সম্মান। আমি চাই, এই মাদ্রাসা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাক আরও বহুদূর।’