গভীর রাতেও ছেলে-মেয়ের ফোন আসক্তি, পিতামাতার জন্য কি উদ্বেগের?

ফোন আসক্তি
ফোন আসক্তি © সংগৃহীত

বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোনের ব্যবহার শিশুদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গভীর রাতেও সন্তানদের ফোন আসক্তি একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রমাণ করে, রাতে ফোন ব্যবহারে তাদের শারীরিক, মানসিক এবং শিক্ষাগত উন্নয়নে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পিতামাতাদের জন্য এটি সতর্কতামূলক সংকেত, যা অবহেলা করলে শিশুর ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন (National Sleep Foundation) এবং ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের গবেষকদের যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুর মধ্যে প্রায় ৬৫% রাত ৯টার পরেও ফোন ব্যবহার করে থাকে। গবেষণাটি ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে এবং স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে গভীর রাতের ফোন আসক্তি শিশুদের ঘুমের ঘাটতি, মানসিক চাপ ও একাগ্রতার সমস্যা বৃদ্ধি করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ফোন ব্যবহারের কারণে শিশুদের ঘুমের গুণগত মান খুবই খারাপ হয়ে যায়। ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue light) মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের নিয়মিত সময়সূচীকে বিঘ্নিত করে। এর ফলে, শিশুদের ঘুমের সময় হ্রাস পায়, তারা রাতে বারবার জেগে ওঠে এবং সকালে ক্লান্ত অনুভব করে।

নিয়মিত ঘুমের অভাব শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং মনোযোগ কমে যায়। একই সঙ্গে, শিশুরা স্কুলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে অক্ষম হয় এবং শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

গভীর রাতেও ফোন ব্যবহারে শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মসম্মানহীনতার প্রবণতা বেড়ে যায়। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে চলমান অনবরত যোগাযোগ এবং ফিডব্যাক পাওয়ার চাপ শিশুদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, যা রাতে ফোনের প্রতি আসক্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. এলেন থমাস মতে, ‘বাচ্চারা প্রায়ই রাতে ফোনের মেসেজ বা নোটিফিকেশন মিস করার ভয়ে অতিরিক্ত সময় ফোনে থাকে, যা তাদের মানসিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলে,’।  

ঘুমের অভাব এবং মানসিক অস্থিরতা শিশুদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা গভীর রাত পর্যন্ত ফোনে ব্যস্ত থাকে, তারা স্কুলের পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে অক্ষম হয়।

পিতামাতার জন্য করণীয়

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে বিশেষজ্ঞরা পিতামাতাদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ দিচ্ছেন:

রাতের ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: ঘুমের এক ঘণ্টা আগে থেকে ফোন ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিন।

শয়নকক্ষ থেকে ফোন সরিয়ে রাখা: শিশুদের ঘর থেকে ফোন সরিয়ে রাখলে তাদের গভীর রাতে ব্যবহার কমানো যায়।

বিকল্প কার্যক্রম: বই পড়া, হালকা ব্যায়াম বা মেডিটেশন-এর মতো কার্যক্রমে উৎসাহিত করুন।

টেকনোলজি সম্পর্কে সচেতনতা: শিশুদের ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিন এবং তাদের স্বাভাবিক ঘুমের গুরুত্ব বোঝান।

সুত্র:

National Sleep Foundation, “Teens and Sleep,” 2019, https://www.sleepfoundation.org & University of Michigan, “Impact of Nighttime Smartphone Use on Children’s Sleep and Mental Health,” 2019