ফেল করায় ক্লাসে ঢুকে ৫০ শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৬
রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, গত ৪ সেপ্টেম্বর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল শুনে ইমতিয়াজ বিদ্যালয়ে গিয়ে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির তিনটি কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় যেসব শিক্ষার্থী ‘অকৃতকার্য’ হয়েছে, তাদের দাঁড় করিয়ে বেত দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেদিন পঞ্চাশের বেশি শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়েছিল।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, “ক্লাস চলাকালে সভাপতি বেত হাতে ঢুকে ফেল করা শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে বলেন। পরে একে একে ডেকে সবাইকে মারেন। এমনকি মেয়েরাও বাদ যায়নি। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মারতে মারতে বেত ভেঙে ফেলেন।”
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বই দেরিতে পাওয়া এবং নতুন পাঠ্যক্রমের কারণে পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন হয়েছিল। ফলে অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। কিন্তু সভাপতি তা শোনেননি, বরং “গরু পেটানোর মতো” আচরণ করেছেন।
ঘটনার পর ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। তবে ১৮ দিন পার হলেও প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহম্মদ বলেন, “আমি ছয় মাস ধরে স্কুলের জন্য পরিশ্রম করছি, বাচ্চারা যেন ভালো ফল করে। তাই একটু রাগারাগি করেছি, শাসন করেছি। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো অভিযোগ নেই। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে এবং পরে মীমাংসা করা হয়েছে।”
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রংপুরের পরশুরাম থানায় এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম বলেন, “সভাপতি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসন করেছিলেন। এ নিয়ে একজন অভিভাবক অনলাইনে জিডি করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলেও গিয়েছিল।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।” তবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ওটা কিছু না। সভাপতি এসে শুধু পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কথা বলেছেন।”
রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু জানাননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”