কাশবনে স্ত্রীকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে হত্যার ঘটনা সিনেমাকেও হার মানাচ্ছে

স্বামীসহ দুইজন গ্রেপ্তার
স্বামীসহ দুইজন গ্রেপ্তার © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে দুদিন আগে কাশবনে পড়ে থাকা এক নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম জানান, ঋণগ্রস্ত হয়ে পারিবারিক কলহের জেরে পরিকল্পনা করে ওই নারীকে হত্যা করেন তার স্বামী। আজ রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। যে হত্যাকাণ্ড সিনেমাকেও হার মানাচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে তুরাগ থানাধীন রাজউকের ১৭ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে কাশবন থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা লাশটি শনাক্ত করতে ডিএমপির থানাসহ আশেপাশের জেলার থানাগুলোতে ছবিসহ তথ্য পাঠানো হয়। এসময় ক্যন্টনমেন্ট থানা থেকে জানানো হয়, মনোয়ারা বেগম নামের এক নারী তার মেয়ে বিথী আক্তার বিলকিসের (৩৫) নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়ে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ওই থানায় জিডি করেন। পরে মনোয়ারা বেগম তুরাগ থানায় গিয়ে বিলকিসের লাশ শনাক্ত করেন। 

মনোয়ারার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিলকিসের স্বামী মো. বাবুল মিয়া (৪৭) এবং মো. সম্রাট (২০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেন তুরাগ থানা পুলিম। তারা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। 

তদন্তে জানা গেছে, পারিবারিক কলহ ও ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে নিহত বিলকিসের স্বামী বাবুল মিয়া পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে হত্যা করেছেন । বাবুলের সন্দেহ ছিল, তার স্ত্রী ঋণের টাকা নিয়ে তার ভাই-মাকে দিয়েছেন।

ডিসি মো. মুহিদুল ইসলা বলেন, গত রবিববার সন্ধ্যায় মানিকদি এলাকার ভাড়া বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বিলকিস। এমন সময় অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে ফোন করে তাকে ডেকে নেন তার স্বামী বাবুল। সে সময় বিলকিসের মা মনোয়ারা ছিলেন ওই বাসায়। বিলকিস বের হওয়ার সময় তার মাকে জানান, তার স্বামী ব্যাংকের চেকবই, এনআইডি আর ছবি নিয়ে তাকে ইসিবি চত্বর এলাকায় যেতে বলেছেন। সুদে টাকা ধার নিতে ওইসব নথি লাগবে। কিন্তু বাসা থেকে বের হওয়ার পর বিলকিসের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি তার মা। কোথাও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে পরদিন তিনি থানায় জিডি করেন।

মুহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ভিকটিমের মায়ের কাছ থেকে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা শনিবার বাবুলকে থানায় এনে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। প্রথমেই বাবুল মিথ্যা তথ্য দিতে থাকে পুলিশকে। সে দাবি করে, ঘটনার দিন সে মানিকদি ছিল, কিন্তু আমরা তার এবং বিলকিসের ফোন লোকেশন উত্তরা এলাকায় পাই। “এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল তার তিন সহযোগী মিলে স্ত্রীকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে এবং এই পরিকল্পনা দুই-তিনমাস আগে থেকেই সে করছিল বলে পুলিশকে জানায়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুরের কালাপানি এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

তাদের ভাষ্য মতে মহিদুল ইসলাম বলেন, সম্রাট বিলকিসের পা চেপে ধরেছিল, আর বাবুল তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। সে সময় আরও দুজন ঘটনাস্থলে ছিল। তাদের নাম-পরিচয় পেয়েছি, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে বাকি দুইজনের নাম প্রকাশ করছি না। আশা করছি বাকি দুইজনকে দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে পারব।

বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে উপ কমিশনার মহিদুল বলেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ব্যাপক পারিবারিক কলহ চলছিল। এর কারণ সে ও তার স্ত্রী প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল। প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা সুদ দিতে হত। ওয়ার্কশপে মেকানিক হিসেবে কাজ করে বাবুল ৩১-৩২ হাজার টাকা বেতন পান। প্রতিমাসে সুদের টাকা দিতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হত।

সুদের টাকার জন্য প্রায়ই পাওনাদাররা বাসায় যেত, এ নিয়ে বিলকিস তার স্বামীকে বকাবকি করত। যা থেকে দাম্পত্য কলহ লেগেই ছিল। 

বাবুলের সন্দেহ ছিল, তার স্ত্রী টাকা নিয়ে তার ভাই-মাকে দিয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছালে ২-৩ মাস আগে বাবুল পরিকল্পনা করে স্ত্রীকে মেরে ফেলবে। সে থেকেই সঙ্গীদের নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বাবুল। সম্রাট পুলিশকে বলেছেন, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তিনি এ হত্যকাণ্ডে জড়ান। বাবুল মাদকাসক্ত বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে অতীতে তার কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই পুলিশের খাতায়।