মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন কি শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
- ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৪
আজকাল ফিটনেস সচেতন অনেকেই প্রোটিনকে ‘সুপার ফুড’ মনে করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাস্থ্যসচেতনতার ট্রেন্ড বাড়ায় অনেকেই নিজেদের খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন যুক্ত করছেন, বিশেষ করে ওজন কমানো বা পেশি গঠনের লক্ষ্যে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের চাহিদার চেয়ে বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করতে পারে। বরং ফাইবার ও প্রোটিনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাই দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোটিন আমাদের শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি শুধু শক্তি জোগায় না, বরং পেশি গঠন, হরমোন তৈরি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ চুল, ত্বক ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হজমের পর প্রোটিন ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়, যা শরীরের নানা প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার অধ্যাপক ও ওয়েটওয়াচার্সের চিফ নিউট্রিশন অফিসার ড. মিশেল কার্ডেল জানান, শরীরের চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত প্রোটিন আর কোনো বাড়তি উপকার করে না। তিনি বলেন, 'প্রোটিন শরীরে সঞ্চিত হয় না। বাড়তি প্রোটিন হয় মূত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যায় অথবা তা শক্তি বা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়।'
তার মতে, সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এটি সরাসরি ক্ষতিকর নাও হতে পারে, তবে দীর্ঘায়ু ও সার্বিক সুস্থতার জন্য প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র প্রোটিন বাড়ালে হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ে।
অন্যদিকে, ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়া ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। দুই ধরনের ফাইবার রয়েছে—দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। বার্লি, বাদাম, বীজ, শিম, ফল ও সবজিতে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়, যা হজমে সহায়ক। আর গমের ভুসি, শাকসবজি ও শস্যজাতীয় খাবারে থাকে অদ্রবণীয় ফাইবার, যা মলত্যাগ সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
ড. ডেভিড লিস্কা বলেন, 'ফাইবারের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। আমরা প্রতিদিন অন্তত ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম ফাইবার গ্রহণের পরামর্শ দিই। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি।'
তাহলে কতটা প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত?
মার্কিন কৃষি দপ্তর (USDA) ও স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তর (HHS) বলছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি কেজি শরীরের ওজন অনুযায়ী ০.৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করাই যথেষ্ট। তবে বয়স, ওজন কমানো বা শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ অনুযায়ী এই চাহিদা বাড়তেও পারে। প্রোটিন ও ফাইবারের ভারসাম্য ধরে রাখতে ড. মিশেল কার্ডেল অনুসরণ করেন একটি সহজ নিয়ম: ৩০-৩০-৩০। অর্থাৎ, প্রতিটি খাবারে অন্তত ৩০ গ্রাম প্রোটিন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ গ্রাম ফাইবার এবং অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম। এই নিয়ম অনুসরণ করে তিনি দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করে চলেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোটিন ও ফাইবারের এই সঠিক ভারসাম্য শুধু স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে নয়, বরং ওজন কমাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।