মাভাবিপ্রবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও পরিকল্পনা
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৩
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়তে (মাভাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) গঠনের দাবির প্রেক্ষাপটে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান ও পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু হানজালা মেরিন বলেন, “আমি এখনো নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্ত নেইনি যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবো কিনা। তবে আমি বিশ্বাস করি আমার ভেতরে নেতৃত্বের গুণ রয়েছে, আর আমি তার প্রকাশ দেখতে চাই। কিন্তু আমার চেয়ে যোগ্য কোনো প্রার্থী যদি থাকে, তবে প্রার্থী না হয়ে আমি তার পাশে দাঁড়াতে চাই। আর যদি প্রার্থী হতেই হয়, তবে আমি ভিপি পদেই প্রার্থীতা ঘোষণা করব। কারণ কেবল সেখানেই আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করতে পারব বলে মনে করি। আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেব। এরপর প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দাবিগুলো আদায়ের চেষ্টা করব। আমি নিশ্চিত করব যাতে কোনো বৈষম্য না থাকে এবং ক্ষতিকর দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকি—আমার সংসদকেও মুক্ত রাখব।
ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বা লক্ষ্য মূলত দুটি— শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ এবং তাদের দাবি আদায়ে কাজ করা, শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখা ও ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা। একে আসলে একটি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রও বলা যায়। আমি জানি, ছাত্র সংসদ ও দলীয় ছাত্র রাজনীতির মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। ছাত্র সংসদ কোনো দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটানোর জন্য কাজ করে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ওপেন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়, যেখানে বিচ্ছিন্ন মতামতগুলোকে সম্মিলিত রূপ দিয়ে প্রকৃত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করা সম্ভব হয়। আমরা দেখেছি, দলীয় স্বার্থে শিক্ষার্থীদের রাজনীতির বলি হতে হয়েছে।
তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে স্বার্থ হাসিল করেছে বিভিন্ন দল। আমি যদি ছাত্র সংসদে দায়িত্ব পাই, তবে নিশ্চিত করব যেন কোনো দলের অ্যাজেন্ডা নয়—শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীর স্বার্থই অগ্রাধিকার পায়। তবে শুধু পরিবর্তনের আশায় বসে থাকা যথেষ্ট নয়। কারণ আমরা জাতিগতভাবে পুরোনো কাঠামোর প্রতিই ঝুঁকে যাই। মুখে না চাইলেও কাজকর্মে সেখানেই ফিরে যাই। কিন্তু নতুন প্রজন্ম পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তারা নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। পরিবর্তনের দায়িত্ব কেবল ছাত্র সংসদ কিংবা কোনো নির্দিষ্ট পদের নয়; পরিবর্তন আসতে হবে গোড়া থেকে। সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, নিজের জায়গায় দৃঢ় থাকতে হবে। বিপ্লবের যে চেতনা ছিল, সেটিকে লালন করতে হবে। আমাদের পুরোনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে— “জনগণের জন্য সরকার, সরকারের জন্য জনগণ নয়।”
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইফতেহার উদ্দীন যায়েদ বলেন, “আমি আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। একটি প্যানেল থেকে নির্বাচন করব, তবে যেহেতু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা হয়নি, তাই কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব তা নির্দিষ্ট নয়। তবে যে পদেই দাঁড়াই না কেন, আমার লক্ষ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখা, অ্যাকাডেমিক সমস্যা সমাধান, কল্যাণমূলক কার্যক্রম জোরদার করা এবং একটি আধুনিক, সুস্থ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমার দৃষ্টিতে ছাত্র সংসদের মূল লক্ষ্য হলো— শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সহায়তা করা এবং প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ মূলত শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরে সমাধানের ব্যবস্থা করে।
আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলো শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও কল্যাণমূলক সমস্যা সমাধান। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডকে আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিই, কারণ এগুলো শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। আমি বিশ্বাস করি, ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ, আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ পাবে। বিশেষভাবে আমি গুরুত্ব দিতে চাই— পরিবহন ও আবাসন সমস্যা সমাধান, আধুনিক লাইব্রেরি ও স্মার্ট ক্লাসরুম সুবিধা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নমূলক সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা নিশ্চিতকরণে। বাকি বিষয়গুলো আমার নির্বাচনী ইশতেহারে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে, ইনশাআল্লাহ।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ আহসান হিরো বলেন, “আমি প্রার্থী হতে চাই, কারণ আমি বিশ্বাস করি ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। তবে কোন পদে নির্বাচন করবো সেটা এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি , কিন্তু আমি যদি নির্বাচন করি এবং নির্বাচিত হই তাহলে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সমস্যা সমাধান, গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহায়তা, এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ করতে কাজ করব।
আমার কাছে ছাত্র সংসদের প্রধান লক্ষ্য হলো— শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, তাদের সমস্যার সমাধান করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ মূলত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে, বিভিন্ন দাবি প্রশাসনের কাছে তোলে এবং শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলো— শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যার সমাধান করা। এর পাশাপাশি, নেতৃত্ব ও সৃজনশীলতা বিকাশে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রমকেও আমি সমানভাবে জরুরি মনে করি। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে আমি আশা করি— আবাসন সংকটের সমাধান, পরিবহন ও চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণায় সহায়তা, এবং একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি চাই ছাত্র সংসদ যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেয়।”
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নাঈমুর রহমান বলেন, “আমি আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অবশ্যই প্রার্থী হতে চাই। আমার বিশ্বাস, ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হবে এবং প্রশাসনকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। আমার কাছে ছাত্র সংসদের মূল লক্ষ্য হলো— শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা ও তাদের অধিকার রক্ষা, শিক্ষার পরিবেশকে আরও উন্নত, ন্যায়সংগত ও গতিশীল রাখা, শিক্ষার্থীদের পক্ষে আলোচনা ও সুবিধা উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম আয়োজন, কল্যাণমূলক কাজ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। বিশেষভাবে আমি অ্যাকাডেমিক সুবিধা বৃদ্ধিতে এবং একটি নিরাপদ, আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে চাই।”
ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রথমত প্রার্থী হতে চাই কিনা বা হলে কোন পদের প্রার্থী হবো এ প্রশ্নকে পাশ কাটিয়েই আপাতত কথা বলতে চাচ্ছি। কারণ আমি মনে করি নেতৃত্ব চাপিয়ে নেওয়ার জিনিস নয় বরং এটা আসা উচিত মানুষের আস্থার জায়গা থেকে। যদি আমার আশেপাশের বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র, জুনিয়রসহ সহপাঠীরা মনে করে যে আমি তাদের কণ্ঠস্বর হতে পারি তাদেরই একজন প্রতিনিধি হিসেবে তাহলে আমি এসব প্রিয় মানুষদের সিদ্ধান্ত ও প্রত্যাশাকেই অগ্রাধিকার দিব, তাদের আহ্বানকে ফেরাবো না। প্রার্থী যদি হতেই হয় তাহলে আমি কাজ করব এমন একটি ক্যাম্পাস গড়ার যেখানে আমার দায়িত্ব থাকবে শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে নৈতিকতা এবং সৎ সাহসের সমন্বয়ে সমাধানের পথ নিশ্চিত করা সেটা যে কোন ধরনের সমস্যাই হোক এবং শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব থাকবে প্রশ্ন করা অর্থাৎ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
আমার চোখে ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, সমস্যা আর সম্ভাবনার সংযোগস্থল। যার লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠকে মূলধারায় আনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ মূলত একটি স্টুডেন্ট পার্লামেন্ট যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর কে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের অংশীদারি একটি ব্রিজ যা প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সঠিক সমন্বয় সাধনে কার্যকর। অর্থাৎ ছাত্র সংসদ কাজ করে অ্যাকাডেমিক সমস্যা, গবেষণা খাত, আবাসন ব্যবস্থা,হল ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান, পরিবহন, ক্রিয়া ও সংস্কৃতি সহ- এ সব কিছুর সাথেই সরাসরি যুক্ত থেকে।
ছাত্র সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বলে আমি মনে করি; শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে একটুখানি স্বস্তি ফেরানো যেখানে ছাত্র সংসদ হবে শুধু সমস্যার রূপরেখা চিহ্নিত করা নয় বরং সমাধানের ধারক ও বাহক। আমি আশা করি ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাবে স্বচ্ছ অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ, ক্যাম্পাস জুড়ে ভয় নয় বরং সাহস আর সম্মানের সাথে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বাতাস বহমান যার মাধ্যমে চির অভিশপ্ত গেস্ট রুম কালচার চিরতরে মুছে যাবে ইনশাআল্লাহ। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এখনো তেমন কিছু ভেবে দেখিনি। তবে মাভাবিপ্রবির ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো মাকসু গঠনের জোরালো দাবি উঠেছে। তাই আমি আশাবাদী, প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্তই নেবে।”
ফুড টেকনোলজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান (আশা) বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো একটি টিএসসি নেই। অথচ টিএসসি হতে পারতো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মুক্ত আলোচনা ছাড়া জ্ঞানচর্চা, বৃদ্ধি এবং সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, আমাদের এখনো নেই একটি অডিটোরিয়াম, যা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এসব সীমাবদ্ধতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বারবার দাবি জানালেও প্রশাসনের নিরব ভূমিকা সত্যিই দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতেও সীমাবদ্ধতার শেষ নেই। পর্যাপ্ত বই ও আসনের অভাব শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি বিমুখ করছে।
মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে নেই প্রয়োজনীয় গ্রন্থ। অথচ এত বছর পরও একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি হয়নি। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিত্যক্ত তলাগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সেটির প্রসার ঘটানো যেতে পারে। একইভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুক্তমঞ্চ অবহেলায় পড়ে আছে, আর পরিবহন সংকট এখন নিয়মিত সমস্যা। প্রশ্ন জাগে, পঁচিশ বছরেও কেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পূর্ণাঙ্গ কাঠামো তৈরি হলো না? এর একমাত্র কারণ প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব এবং জবাবদিহিতার অভাব। তাই আমি মনে করি, যে-ই প্রার্থী হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। ছাত্রসংসদের মূল লক্ষ্য হতে হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবে রূপ দেওয়া, প্রশাসনকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা, অ্যাকাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সমন্বয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখা—এসবই হবে এর দায়িত্ব। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা ছাত্রসংসদের কাজ নয়। মনে রাখতে হবে, প্রার্থী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে মাঠে নামবেন, নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর স্বপ্নের ফসল। তাঁর স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণার মানোন্নয়ন, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ, সেমিনার, বিতর্ক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি।
বিশেষ করে এআই, রোবোটিক্স, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিপার্টমেন্টভিত্তিক প্রজেক্ট, জব ফেয়ার ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। শুধু সেমিস্টার ও অ্যাকাডেমিক নির্ভর শিক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে পড়বে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চায়ন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বহিরাগত প্রভাবমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা ছাত্রসংসদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হওয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি, সীমাবদ্ধতা অনেক থাকলেও পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা ভয়মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে, সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদার আসন লাভ করবে। তখনই আমরা সত্যিকারের অর্থে মজলুম জননেতার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারব।”
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের (ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফ অন্তর বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি আমি নিজ উদ্যোগে “সেই রঙ ম্যানুফ্যাকচারিং হাউজ” প্রতিষ্ঠা করেছি এবং বর্তমানে হেড অব বিজনেস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আলহামদুলিল্লাহ, এর মাধ্যমে ১৫–২০ জনের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আমাদের কাজ ও উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো-তে ফিচার হওয়া আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এই অভিজ্ঞতা আমাকে টিমওয়ার্ক, নেতৃত্ব এবং উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তোলার শিক্ষা দিয়েছে, যা আমি বিশ্বাস করি ছাত্র সংসদের কার্যক্রমেও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।
প্রথম বর্ষ থেকেই আমি ক্লাবিং, সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং উদ্যোক্তা উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। এসময় লক্ষ্য করেছি—আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ কাঠামো, মেন্টরশিপ এবং রিসোর্সের অভাবে ক্যারিয়ার গঠনে ঘাটতি দেখা দেয়। তাই MBSTU Entrepreneur ব্যানারে আমি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ও উদ্যোক্তা-সহায়ক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি আমি বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের তরুণদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি Social Business Day-তে, যেখানে চিফ গেস্ট ছিলেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস (চিফ এডভাইজর, বাংলাদেশ ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট)। এটি আমার জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রসমাজ সবসময় পরিবর্তনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে—ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের অধিকার, কল্যাণ এবং নেতৃত্ব বিকাশের জন্য। আমার বিশ্বাস, ছাত্র সংসদের মূল লক্ষ্য হলো: অ্যাকাডেমিক উন্নয়ন, ক্যারিয়ার প্রস্তুতি, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও ক্লাবিং সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সেবা প্রদান।
আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থী-বান্ধব কার্যক্রম। যেমন—পরিবহন, হল, কাফেটেরিয়া, নিরাপত্তা, বিদেশযাত্রা, অ্যালামনাই সংযোগসহ শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও ক্যাম্পাস-সংক্রান্ত সব কার্যক্রমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও ক্লাবিং সংস্কৃতিকে আরও সক্রিয় করা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রসারিত করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক, সৃজনশীল ও নেতৃত্ব বিকাশ নিশ্চিত করা। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার অভিজ্ঞতা এবং ক্লাবিং কার্যক্রমের ঘাটতি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমি কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছি— বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কোম্পানির কোলাবোরেশন করানো, নিয়মিত জব ফেয়ার ও ক্যারিয়ার সামিট আয়োজন, উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়ক মেন্টরশিপ ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করা, সব ক্লাবকে সংগঠিত করে সম্মিলিত কার্যক্রম চালু করা, ঢাকার বড় কোম্পানি ও নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের জন্য যুগোপযোগী নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা।
আমার বিশ্বাস, ছাত্র সংসদ কেবল ক্যারিয়ার উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এটি সহশিক্ষা ও ক্লাবিং সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সৃজনশীলতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা গড়ে তুলবে। আমি এই বিশ্বাস নিয়ে ‘ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক সম্পাদক’ পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং ইনশাআল্লাহ সুযোগ পেলে আন্তরিকভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”
ফুড টেকনোলজি বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, “আমি প্রার্থী হতে চাই না, তবে চাই যারা প্রার্থী হিসেবে যোগ্য তারাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচিত হোক এবং ইন্টারনাল এক্সটারনাল যাবতীয় সমস্যা পর্যালোলনা করুক। ছাত্র সংসদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মতামত সুবিধা অসুবিধা দেখা অধিকার রক্ষা করা, নেতৃত্ব গড়ে তোলা, শিক্ষা পরিবেশ উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু ভাবে হচ্ছে কিনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ মূলত যে কাজ করবে সেটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধার দিক দেখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী,শিক্ষ্কদেরও সুবিধা অসুবিধা দেখে সমাধানের চেষ্টা করবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনটা দরকার কোনটা দরকার না এই দিকগুলো সবার থেকে মতামত নিয়ে প্রশাসনের সাথেও আলোচনা করবে, এতে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল সেটাও অনেকটা দূর হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রতিবছর যে পরিমাণে ভার্সিটির জন্য বাজেট পায় সেটা কি সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীদের এবং বিদ্যালয়ের কর্মচারী ও কর্মবৃন্দ এদের কল্যাণে খরচ হচ্ছে কিনা,আর না হলেও কেন হচ্ছে না। প্রথমত মনে করি অ্যাকাডেমিক যে ধরনের অপূর্ণতা গুলো আছে যেমন ল্যাব সংকট সেমিনার লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের অভাব এগুলো পূরণ হবে। এরপর নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যাটাও নিরাময় হয় যাতে, মেয়েদের ক্ষেত্রে তাই সেটা অনেক বেশি ম্যাটার করে, সেই ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষ থেকেই যাতে কোন একজন মেয়ে শিক্ষার্থী হল পায়। তাছাড়াও আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে মানসম্মত থাকা খাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে, শিক্ষার্থীদের জন্য সুন্দর একটা সাংস্কৃতিক অঙ্গন যাতে তৈরি হয় l সেই দিকটাও নিশ্চিত হবে।”
ফার্মেসি বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফাহিম হাসান বলেন, “মাওলানা ভাসানী" ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একজন অবিসংবাদিত নেতা।তিনি সারা জীবন অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন।তার নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ এ নেই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ!
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের যাবতীয় দাবি-দাওয়া তুলে ধরার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই, ফলে ক্যাম্পাসভিত্তিক সকল সমস্যার সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের পথ সহজ হয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সহ বিভিন্ন কাজে প্রায়ই দেখা মেলে অনিয়মের।সেই অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অতীব জরুরি। সর্বোপরি ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব ভয়েস তৈরি করবে, যা আমাদের মৌলিক দাবিগুলো পূরণে সহায়তা করবে বলে মনে করি। আমি ফার্মেসি বিভাগের একজন নবীন শিক্ষার্থী।আমি কোনো প্রার্থী হবো না।তবে,মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) প্রতিষ্ঠিত হলে যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই।”
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আসন্ন মাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে ইতিবাচক সাড়া তৈরি হয়েছে। তারা চান— ছাত্র সংসদ হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্ল্যাটফর্ম, দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ক্ষেত্র, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর গুরুত্ব পাবে।