ছোট্ট মূলধন থেকে বড় স্বপ্ন, যবিপ্রবি শিক্ষার্থীর ‘সুজাস ফুড হেভেন’
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫
সফলতা শুধু বড় পুঁজির অপেক্ষায় আসে না, আসে সাহস, নিষ্ঠা আর স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা থেকে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বি. এম. সুজা উদ্দিনের উদ্যোগ ‘সুজাস ফুড হেভেন’ যেন তারই জীবন্ত উদাহরণ। মাত্র ৩ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করা ছোট্ট উদ্যোগটি আজ একটি স্বপ্নের নাম, সাহসের নাম।
সুজার পরিবারে অভাব ছিল না—বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তবে সুজার ভেতরে জন্ম নেয় নিজে কিছু গড়ে তোলার, উদ্যোক্তা হওয়ার অদম্য তৃষ্ণা। তাই অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময়েই বন্ধু ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নেওয়া ১৫০০ টাকা করে মোট ৩ হাজার টাকায় শুরু করেন নিজের অনলাইন ব্যবসা।
প্রথমে ছিল শুধু ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে পণ্যের প্রচার। অর্ডার পেলে নিজেই ডেলিভারি দিতেন, কখনো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনো পরীক্ষা শেষে। শহরের বাইরের অর্ডার পাঠাতেন কুরিয়ারে। একসময় সাহস করে ক্যাম্পাসে একটি টেবিলেই সাজিয়ে বসান কিছু স্বাস্থ্যকর ও অরগানিক পণ্য। সেই ছোট্ট টেবিলটি ধীরে ধীরে রূপ নেয় ‘সুজাস ফুড হেভেন’-এ।
পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পথটা সহজ ছিল না। সুজা নিজেই স্বীকার করেন—শুরুতে দোকানে বসতে লজ্জা লাগত, অনেকে কটু কথা বলত, কখনো কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হতো। তবু হাল ছাড়েননি। সময়ের সঙ্গে বাড়ে অভিজ্ঞতা, যুক্ত হয় স্টাফ ও পার্টনার, আর বাড়ে আত্মবিশ্বাসও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও তাকে সহায়তা করা হয় স্টল বসানোর সুযোগ দিয়ে এবং উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তার বন্ধুরাও পাশে ছিলেন কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ উৎসাহ দিয়ে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মী ভিসায় যেতে এক লাখ ডলার ফি বাড়ালেন ট্রাম্প
বর্তমানে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন সুজা। চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের খরচ, দিচ্ছেন কর্মচারীদের বেতন, এবং নতুন বিনিয়োগও করছেন। যদিও এখনো পুরোপুরি চাপমুক্ত নন, তবু তার বিশ্বাস—এই চাপই তাকে আরও শক্ত করবে, সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সুজা বলেন,‘আমার পথচলা একেবারে সহজ ছিল না। প্রথম দিকে লজ্জা লাগত দোকানে বসতে। এখন গর্বের সঙ্গে বলতে পারি—‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট।’ গ্রাহকদের ভালোবাসাই আমার আত্মবিশ্বাসকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘সুজাস ফুড হেভেন’ এখন শুধু একটি খাবারের দোকান নয়—এটি একজন তরুণ উদ্যোক্তার বড় স্বপ্নের নাম। সুজার লক্ষ্য ভবিষ্যতে একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের আউটলেট গড়ে তোলা, যেখানে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতোমধ্যে একজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন, সেটিকেই তিনি দেখছেন তার সাফল্যের সূচনা।
অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সুজার পরামর্শ, ‘যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট পরিসরে শুরু করুন। এমন পণ্যে কাজ করুন যা সম্পর্কে আপনি জানেন এবং যা করতে ভালো লাগে। এতে সময়ের সঠিক ব্যবহার হবে, অভিজ্ঞতা বাড়বে, আর পড়াশোনা শেষে বড় পরিসরে শুরু করাও সহজ হবে।’