অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
পিআর নিয়ে গড়িমসি না করে গণভোট দিয়ে জনমত যাচাই করুন
- টিডিসি রিপোর্ট
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৩২
পিআর নিয়ে গড়িমসি না করে প্রয়োজনে গণভোট দিয়ে জনমত যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বরিশালে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোটের বিকল্প নেই। দেশের মানুষ এমন একটি নির্বাচন চায় যাতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেজন্য প্রয়োজন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। কেননা সব ভোটের মূল্যায়নের একমাত্র পন্থা হলো পিআর পদ্ধতি। এই পদ্ধতি নিয়ে গড়িমসি না করে প্রয়োজনে গণভোট দিয়ে পিআর এর জনমত যাচাই করুন।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট ও দোসরদের এদেশে আর সুযোগ দেয়া হবেনা। এখনো প্রশাসনের মধ্যে ফাসিস্টের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। তাদের সরিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করতে হবে। জাতীয় পার্টিসহ যেসব দল ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরেই নির্বাচন দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ
সমাবেশে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বাবরের সভাপতিত্বে ও মহানগর এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আতিকুল্লাহর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও বরিশাল জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল জব্বার। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কয়েক হাজার জামায়াতের নেতাকর্মী।
এদিন দেশের সব মহানগরী শহরগুলোতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। এসব কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, পিআরের মধ্য দিয়ে সবার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পেশীশক্তি ও কালো টাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন হবে। পাশাপাশি কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারবে না। যারা এসব চায় না, তারাই মূলত জনগণের বিপক্ষে গিয়ে পিআর ঠেকাতে চায়
জামায়তের কর্মসূচীতে রংপুরে দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রামে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সিলেটে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আজাদ, রাজশাহীতে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, ময়মনসিংহে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং খুলনায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এড. মতিউর রহমান আকন্দ অংশ নেন।
রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আয়োজিত সমাবেশে দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ফ্যাসিবাদী শাসন বন্ধে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আর স্বৈরাচারী শক্তির ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায়না। জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত রূপরেখার ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচন অবশ্যই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে হতে হবে, যাতে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী সংসদে সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদি হয়ে উঠার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি ভোটার যেন অবাধ ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, গণহত্যা, লুটপাটসহ সব ধরনের দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে অপরাধে অপরাধী, জাতীয় পার্টি এবং ১৪দলও একই অপরাধে অপরাধী। তাই ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দাবিগুলো এখন দেশের জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অতিদ্রুত জনগণের এইসব ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মহানগরী আমির মাওলানা এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-৩ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা আমীর ও রংপুর-৫ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
চট্টগ্রামের কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ স্টাইলে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গণমিছিল নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।
সিলেটের সমাবেশে জামায়াত নেতা ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কি জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্খা ছিল? অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কঠোর হাতে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যেনতেন উপায়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশনের সব সিদ্ধান্ত সেই বিশেষ দলের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সব সংকট আলোচনার টেবিলে সমাধানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সেভাবে না চাইলে রাজপথে সমাধানেও আমরা রাজি। জনমত যাচাই করতে চান তাতেও রাজী, গণভোট দিন। তবুও এই দেশে কাঙ্খিত সংস্কার ছাড়া সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় দিয়ে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেয়া যাবেনা।
ময়মনসিংহ নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জামায়াতের মিছিল পূর্ব সমাবেশে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, জুলাই সনদ এদেশের মানুষের আকাঙ্খা, ভালোবাসা ও প্রত্যাশার। আরেকটি স্বৈরাচারী সরকার যেন আবার চেপে বসতে না পারে সেজন্য জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে। সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য জামায়াতের এ আন্দোলন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সমাবেশ শেষ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউনহল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
খুলনার কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এরপর ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। পিআরের পক্ষে দেশের ৭০ ভাগ জনগণ সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে। একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়।
কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারে না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আছে নাকি বিপক্ষে আছে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা মেনে নেবো। কিন্তু দেশের বড় দলটি গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সবার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পেশীশক্তি ও কালো টাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হোক, সরকার গঠন হোক, কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে না উঠুক; যারা চায় না, তারাই জনগণের বিপক্ষে গিয়ে পিআর ঠেকাতে চায়।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জামায়াত। নগরীর ডাকবাংলোস্থ সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরীঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড় ও সঙ্গীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ি (শহীদ মীর মুগ্ধ) মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।