অনেক কাজ করেছি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দিন হয়নি: আইন উপদেষ্টা
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অল্প সময়ে তিনি এমন অনেক কাজ করেছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দিন হয়নি।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার এয়ারপোর্ট এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি তো ফুটবল খেলোয়াড় বা মঞ্চের অভিনেতা না যে, যা করছি তা দেখতে পারবেন। আমরা প্রায়ই শুনি-আপনি কি করেছেন? শহীদের রক্তের ওপর এখানে বসেছেন? আমরা আপনাকে এখানে বসিয়েছি?
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এখন থেকে আর পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, যৌতুকসহ ৮টি বিষয়ে সরাসরি মামলা করা যাবে না। মামলা দায়েরের আগে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা বিধান রেখে আইন কার্যকর হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইন ও বিচার সম্পর্কিত যে পরিবর্তন করে দিয়েছি তা পরবর্তী সরকার অব্যাহত রাখলে দেশের সাধারণ মানুষ সঠিক বিচার পাবে। এমন আরও অনেক কাজ করা হয়েছে যার ফল পরবর্তীতে পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচনের দিন একযোগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ এসেছে: আলী রীয়াজ
তিনি আরও বলেন, এ উদ্যোগ সামাজিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে, যা মামলাজট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অনেকের মামলা ছাড়া কম সময় ও কম খরচে বিরোধ সমাধান হচ্ছে। মামলা করার আগে বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার কার্যক্রমের দারস্থ হতে হবে। পরে চাইলে মামলায় যেতে পারবেন। এর ফলে বিচারপ্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আইনগত সহায়তা পাবেন।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার আইন ও বিচার সম্পর্কিত যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে তা পরবর্তী সরকার অব্যাহত রাখলে দেশের মানুষ সহজে ন্যায়বিচার পাবেন।
জানা যায়, আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণ ও আরও গতিশীল করতে ইতোমধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশের আওতাভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে— পারিবারিক বিরোধ, পিতামাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, ক্রয়, বণ্টন, যৌতুক ইত্যাদি এখন থেকে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার আওতায় আনা হচ্ছে।
আইন সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রথম ধাপে এ বাধ্যতামূলক বিধান ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের ১২ জেলায় কার্যকর হতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আইনত সহায়তা প্রদান আইনের সাম্প্রতিক সংস্কার বিষয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র জেলা জজ শেখ আশফাকুর রহমান ও মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বাস্তবায়নে জেলা বিচার বিভাগের ভূমিকা বিষয়ে সিলেটের জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী বক্তব্য প্রদান করেন।
তারা বলেন, এ ধরনের যুগোপযোগী সংস্কার বিচার ব্যবস্থাকে অধিক গতিশীল ও জনবান্ধব করবে। জেলা লিগ্যাল এইড জনগণের আস্থার প্রতীক হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন GIZ বাংলাদেশের বর্তমান কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্টিনা বুরকার্ড।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন— সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.সারোয়ার আলম, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, জেলা দায়রা জজ আব্দুল হালিম, সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিসেস্ট ইলিয়াস আহমদ, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।