দুপুরে খাবারের পর ঘুম ও অলসতা কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৫২
স্বাভাবিকভাবেই আমরা সকাল ও রাতের তুলনায় দুপুরে একটু বেশিই খেয়ে থাকি। দুপুরে খাওয়ার পরপরই শরীরে অলসতা ও ঘুম ঘুম ভাব অনূভুত হয়। বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম চলে আসে। এতে মানুষ প্রায়শই সমস্যায় পড়ে। বিশেষ করে যাদের অফিস থাকে তাদের জন্য এই সমস্যাটি কখনও কখনও অস্বস্তিকর হয়। খাওয়ার পর কেন এই সমস্যা হয়? এটি কি কোনো রোগের লক্ষণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছে, এটি একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় পোস্ট প্রুডেনশিয়াল ড্রিনোমি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি কোনও রোগ নয় বরং শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ।
খাবারের পর ঘুম ঘুম ভাব হওয়ার কারণ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুপুরে খাওয়ার পর বেশি ঘুম এবং অলস বোধ করার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সাধারণত, যাদের হজম এবং ঘুমের ধরণ ঠিক থাকে না তাদের ক্ষেত্রে খাওয়ার পরে ঘুম ঘুম ভাবের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই বিষয়ে করা সমস্ত গবেষণা দেখায় যে এর পিছনে একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তবে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারাও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ঘুমের অভাব বা ঘুম সম্পর্কিত ব্যাধিগুলিও খাওয়ার পরে ঘুম এবং ক্লান্ত বোধের একটি প্রধান কারণ হতে পারে। এছাড়াও, যখন আপনি খাবার খান, তখন পাচনতন্ত্রে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে কমে যায়, যার ফলে ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে।
উল্লেখ্য, খাবার পরিপাকতন্ত্রে পৌঁছানোর পরপরই গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ায়, অনেক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মস্তিষ্ককে ঘুমোনোর সংকেত দেওয়ার কাজ করে। উচ্চ প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ঘুমঘুম বা অলসতার অনুভূতি হয়। দুপুরের খাবারের পর ঘুম ঘুম ভাব হওয়ার একটি বড় কারণ হল অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। দুপুরের খাবারে যখন আমরা বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যেমন ভাত, রুটি, আলু বা মিষ্টি খাই, তখন শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড, বিশেষ করে ট্রিপটোফ্যান পাঠাতে সাহায্য করে। ট্রিপটোফান সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন তৈরি করতে উৎপন্ন হয় এবং এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলি ঘুমের কারণ হয়। অর্থাৎ যদি আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাহলে এটি আপনার ঘুমের অনুভূতিও তৈরি করতে পারে।
কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে?
কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার একটি স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে শরীরের। এটা স্বাভাবিক এবং খাবার না খেলেও দুপুরে ঘুম পেতে পারে। এটি কাটাতে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবার: দুপুরের খাবার তালিকায় নিয়মিত ভাতের পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল রাখা যেতে পারে। এছাড়া বাদাম, মাছ, ডিম এবং সবুজ শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে।
বেশি পরিমাণে না খাওয়া: অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি ধীরে ধীরে পরিবর্তন করা জরুরি। এক্ষেত্রে ক্ষুধা মেটাতে একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প করে কয়েকবার খেতে পারেন।
শারীরিক ব্যায়াম: খাবারের পর হালকা হাঁটা বা কিছু সময়ের জন্য স্ট্রেচিং করতে পারেন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং অলসতা কমাতে সাহায্য করে।
বেশি পরিমাণে পানি পান: পানি শরীরের জন্য অন্তত উপকারী। শরীরে পানিশূন্যতাও ঘুম ঘুম বা অলসতার কারণ হতে পারে। তাই খাবারের কিছুক্ষণ পর পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
এছাড়া রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং ভালোভাবে ঘুমানো জরুরি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুপুরের খাবার সবসময় সুষম রাখতে পরামর্শ দেন।