ঐতিহাসিক বারদুয়ারী মসজিদ: ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনন্য সাক্ষী

ঐতিহাসিক বারদুয়ারী মসজিদ
ঐতিহাসিক বারদুয়ারী মসজিদ © টিডিসি ফটো

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গরজরিপা ইউনিয়নের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক অসাধারণ স্থাপত্য নিদর্শন—ঐতিহাসিক বারদুয়ারী মসজিদ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে থাকা এই মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়, বরং শেরপুরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ইসলাম প্রচারের এক জীবন্ত দলিল।

ধারণা করা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ার আগেই এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ শাসনামলে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মসজিদটি মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় এবং চারপাশে জন্ম নেয় ঘন জঙ্গল। ফলে বহু বছর ধরে স্থানটি অচেনা, জনশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকে।

ষাটের দশকে জামালপুর জেলার মাওলানা আব্দুল আজিজ শ্রীবরদীতে ভূমি জরিপ কার্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় এক রাতে স্বপ্নে দেখেন, মসজিদটি মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। তিনি পরদিন জামালপুর থেকে শেরপুর এসে এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং কয়েক দিন অবস্থান করে জঙ্গলে অনুসন্ধান চালান। জনশ্রুতি অনুযায়ী, তিনি চোখ বন্ধ করে একটি পাথর নিক্ষেপ করেন এবং উপস্থিত জনতাকে বলেন, পাথর যেখানে পড়বে সেখানে খনন শুরু করতে। প্রায় ১০ ফুট খননের পর মসজিদের উত্তর দেওয়ালের সন্ধান মেলে। এরপর ধাপে ধাপে পুরো মসজিদটি মাটির নিচ থেকে বের করা হয়।

১৯৬৩ সালে স্বপ্নে দেখা নকশা অনুযায়ী মসজিদের সংস্কারকাজ শুরু হয়। সেই নকশায় ছিল ১২টি দরজা ও তিনটি গম্বুজ। স্থানীয় লোকজন তাদের জমি দান করে মসজিদের পরিসর বৃদ্ধি করেন এবং দানবাক্সের অর্থ দিয়ে ধীরে ধীরে মসজিদের উন্নয়ন চালিয়ে যান। সংস্কার শেষ হওয়ার কিছুদিন পর মাওলানা আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুন: হলের সিট বণ্টন স্থগিত ঘোষণার পরও ‘পছন্দে’ ও তদবিরে বরাদ্দ

বর্তমানে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে মসজিদটির পাঁচতলা নির্মাণকাজ চলছে। মসজিদের অপরূপ কারুকার্য দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। বিশেষ করে শুক্রবারে মুসল্লিদের ঢল নামে, পুরো এলাকা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। নির্মাণ সম্পন্ন হলে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখানে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

প্রাচীনকালে গরজরিপা ছিল শেরপুরের রাজধানী। তাই মসজিদটি এ অঞ্চলের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের এক ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করছে। বর্তমানে মসজিদের খেদমতে রয়েছেন একজন খতিব, একজন স্থানীয় ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও একজন খাদেম। মসজিদটির ১২টি দরজার কারণেই এর নাম রাখা হয়েছে ‘বারদুয়ারী মসজিদ’।

ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বারদুয়ারী মসজিদ শুধু শেরপুরবাসীর নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের গর্ব। এটি যেমন ইসলাম প্রচারের এক প্রাচীন স্মারক, তেমনি স্থাপত্যকলা ও ধর্মীয় সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ।