রাজশাহী কলেজ
হলের সিট বণ্টন স্থগিত ঘোষণার পরও ‘পছন্দে’ ও তদবিরে বরাদ্দ
- মো. আব্দুল আলিম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০১
রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ প্রক্রিয়া প্রশাসনিকভাবে স্থগিত থাকলেও বাস্তবে সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বরং নোটিশ ছাড়াই গোপনে চলছে সিট বণ্টন। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের পছন্দের এবং বিভিন্ন মহলের তদবিরে পরিচিত শিক্ষার্থীরাই গোপনে পাচ্ছেন সিট।
গত জুলাই মাসে ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ সীমিত পরিসরে সিট বরাদ্দের জন্য আবেদন আহ্বান করে। পরে ২১ আগস্ট প্রকাশিত তালিকায় অনার্স শিক্ষার্থীদের ইন্টারমিডিয়েট ভবনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রশাসন ভবনের সামনে তারা অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানালে কর্তৃপক্ষ সেদিন রাতেই চূড়ান্ত সিট তালিকা বাতিল করে। এরপর থেকেই মুসলিম ছাত্রাবাসে আনুষ্ঠানিকভাবে সিট বরাদ্দ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে।
তবে মুসলিম ছাত্রাবাসের একাধিক ব্লকে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোনো তালিকা বা নোটিশ প্রকাশ ছাড়াই ৮ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে নতুন করে সিট দেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কয়েকজন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে সিট না পেলেও দীর্ঘদিন ধরে বিনা জামানতে সেখানে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: ছাত্র সংসদ গঠনে প্রশাসনের আগ্রহ নেই, অভিযোগ হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের
বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ ভবনে (ই-ব্লক) চার থেকে পাঁচজন, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভবনে (সি-ব্লক) এক থেকে দুইজন, এবং বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ভবনে (এ-ব্লক) অন্তত একজন শিক্ষার্থী গোপনে সিট বরাদ্দ পেয়েছেন। আবার এ-ব্লকে একজন শিক্ষার্থী বিনা অনুমতিতে অবস্থান করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাকি ভবনগুলোতেও সিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো নিশ্চিত বক্তব্য আসেনি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুব আলী জানান, ছাত্রাবাসে উঠার জন্য তিনি একধিকবার আবেদন করেছি, কিন্তু যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সিট পাননি বরং প্রশাসন অযোগ্যদের সিট দিয়েছে। প্রশাসন প্রকাশ্যে সিট বরাদ্দ স্থগিত রাখলেও গোপনে কিছু শিক্ষার্থীকে সিট দিয়ে থাকলে, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক।
আরেকজন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, আমরা শুরু থেকেই হোস্টেলে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে আমি স্যারের কাছে সিটের জন্য একাধিক গিয়েছি তিনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও সেই সময় বিভিন্ন সুপারিশে অন্যদের সিট দেওয়ার বিষয়টি আমি জানার পর স্যারদের অবগত করলে তারা তা অস্বীকার করেন। অথচ আমি যখন সিটের জন্য৷ অফিসে কথা বলতে গিয়েছিলাম তখন বাইরে সিট বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল ও আবেদন নিয়েছিল।
ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুবাইয়াত-ই-আফরোজ জানান, আমরা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নোটিশ ছাড়াও বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী তুলতে পারি। আমার জানা মতে পাঁচ-ছয় জন শিক্ষার্থী উঠেছে। এর মধ্যে দুইজনকে আমি নিজেই বিশেষ বিবেচনায় তুলেছি। এর বাইরে আর কতজন উঠেছে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. শাহ মো. মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে সিট বরাদ্দ সাময়িক স্থগিত রয়েছে। এমন অবস্থায় নতুন শিক্ষার্থী ওঠার কথা নয়। কেউ যদি গোপনে উঠে থাকে সেটা আমার জানা নেই।