বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চালুর দাবি শিক্ষার্থীদের
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৭
বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অচিরেই রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও আরও কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ বিরতির পর একের পর এক ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় দেশের শিক্ষাঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংসদ চালুর দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতে, ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত একটি ‘কথা বলার প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি হবে। তবে এ নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নামমাত্র অলাভজনক হলেও বাস্তবে সেগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগ, ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের কার্যকর কোনো তদারকি নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ইচ্ছামতো চলে, অথচ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সমস্যাগুলো কোথাও বলতে পারেন না। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনীহা আছে।
সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (PUSAB) তাদের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়—“বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ, কী ভাবছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা?” শিরোনামে। ওই পোস্টের মন্তব্যে ভিন্ন ভিন্ন মতামত উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: ডাকসুতে শেখ হাসিনার ‘আজীবন সদস্য’ পদের কী হবে?
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধর ভাই মীর স্নিগ্ধ লিখেছেন, ছাত্র সংসদে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক অঙ্গসংগঠনের পরিচয় কেউ বহন না করে, তবে এটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। সেই হিসাবে এর অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মঈন মনে করেন, জাতীয় নেতৃত্ব গঠনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হলে ছাত্র সংসদ দরকার।
রফিকুল ইসলাম মন্তব্য করেন, অবশ্যই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। কেননা, এতে শিক্ষার্থীদের যেমন নেতৃত্ব বিকশিত হবে, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যায়ের বিরোধীতার করার শক্তিশালী প্লাটফর্ম হবে।
মুহাম্মদ মুহতাসিম লিখেছেন, প্রাইভেটে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রয়োজন আছে, তবে সবাই এটাকে ভুলভাবে রাজনীতি হিসেবে দেখে।
অন্যদিকে অনেকে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। কেউ লিখেছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তার অভিজাত ধারা ধরে রাখুক, অযথা রাজনীতির বস্তি বানানোর দরকার নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, অনেক পরিবার তাঁদের সন্তানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে প্রাইভেটে ভর্তি করান, তাই প্রাইভেট ভার্সিটি রাজনীতি মুক্ত থাকা উচিত। কেউ কেউ মনে করছেন, সংসদ হলে সেটি প্রথাগত নয়, বরং প্রতিনিধি ভিত্তিক হওয়া উচিত, যেখানে কারও রাজনৈতিক দলের পদ থাকা যাবে না।
PUSAB-এর দপ্তর সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সোহাগ হোসাইন বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী আশঙ্কা করেন ছাত্র সংসদ চালু হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ‘নোংরা রাজনীতি’ ঢুকে পড়তে পারে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বস্ত করলে এটি শিক্ষার্থী-প্রশাসনের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়তে পারে। তাঁর মতে, ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সমস্যা দ্রুত জানাতে ও সমাধান করতে পারবে, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে। সঠিক কাঠামো নিশ্চিত করা গেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সানন্দে ছাত্র সংসদকে গ্রহণ করবে।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যদিও ছাত্র ইউনিয়ন বা সংসদ নিয়ে সরাসরি কোনো বিধান নেই, তবুও ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ইউনিয়ন থাকা উচিত। উন্নত বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন রয়েছে। তবে আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চালু করার সঙ্গে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির সংযোগ ঘটতে পারে, যা আমাদের সংস্কৃতিতে ইতিমধ্যেই দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা তাঁদের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারে এবং আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করব। যদি ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হয়, সেটি অবশ্যই ভালো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে হওয়া উচিত, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য নয়।
দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬টি। লাখো শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছেন। তাই ছাত্র সংসদ নিয়ে আলোচনা এখন শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছড়িয়ে পড়েছে প্রাইভেট ক্যাম্পাসগুলোতেও।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একমাত্র গণ বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ রয়েছে। এর লক্ষ্য শিক্ষাব্যবস্থা গতিশীল করা ও অরাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি। আসছে ২৫ সেপ্টেম্বর সেখানে ৪র্থ বারের মতো সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।