বিড়াল কেন পানি ভয় পায়, কেন বাহাতি হয়?

 বিড়াল
বিড়াল © সংগৃহীত

বিড়াল আমাদের সকলের প্রিয় একটি প্রাণী। ছেলে মেয়ে সকলের কাছেই বিড়াল সমানভাবে প্রিয়। বিড়ালের রাজকীয় চলাফেরা, স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমা, সামাজিকীকরণ মানু্যষের সাথে সহজে সখ্যতা গড়ে তোলে। তবে কখনো কি লক্ষ্য করেছেন বিড়ালের পানি ভীতি রয়েছে, আবার অনেক সময় তাদেরকে বাহাতি হিসেবেও দেখা যায়? কিন্তু বিড়াল কেন পানি দেখে ভয় পায়, কেনই বা বাহাতি হয়ে থাকে? বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কী বলেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে ,বিড়ালের পানি ভীতি একক কোনো কারণে নয়। এটি তাদের বিবর্তন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ঘ্রাণশক্তি এবং সামাজিক অভিজ্ঞতার সমন্বিত প্রভাব। অন্যদিকে, বাহাতি হওয়ার বিষয়টি তাদের স্নায়ুবিজ্ঞানের স্বাভাবিক বৈচিত্র্য।

প্রাণী আচরণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিড়ালের পানি-ভীতি মূলত তাদের পূর্বপুরুষের জীবনযাপন ও বিবর্তনমূলক ইতিহাসের ফল। গৃহপালিত বিড়ালের পূর্বপুরুষ হলো আফ্রিকান ওয়াইল্ডক্যাট (African Wildcat)। এরা মূলত মরুভূমি ও শুষ্ক এলাকায় বাস করত, যেখানে বড় জলাশয় বা সাঁতারের প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং, তাদের জিনগত কাঠামোয় পানির সঙ্গে অভিযোজনের প্রবণতা তৈরি হয়নি।

যেখানে বাঘ, জাগুয়ার কিংবা ফিশিং ক্যাট পানিতে সাঁতার কেটে শিকার করে, সেখানে আফ্রিকান ওয়াইল্ডক্যাট মাটির কাছাকাছি ছোট প্রাণী যেমন ইঁদুর শিকার করত। ফলে, পানির প্রতি ভীতি অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই গৃহপালিত বিড়ালের মধ্যে রয়ে গেছে।

ওকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রাণীর বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক গবেষক জেনিফার ভনক জানান, বিড়ালের শরীর পানিতে ভিজলে তাদের পশম ভিজে ভারী হয়ে যায়। এতে তারা চলাফেরায় অস্বস্তি বোধ করে এবং নিজেকে অসহায় মনে করে। তাছাড়া ভেজা পশম তাদের শরীরের গন্ধ বা ফেরোমোন ঢেকে দেয়, যা বিড়ালের মানসিক চাপ বাড়ায়।

পাশাপাশি, পানির রাসায়নিক উপাদান যেমন ক্লোরিন বা ধাতব গন্ধ বিড়ালের ঘ্রাণশক্তিকে ব্যাহত করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তারা পানিকে শুধু ঠান্ডা বা ভিজে ভাব নয়, বরং এক ধরনের “গন্ধযুক্ত শত্রু” হিসেবেও গ্রহণ করে।

বিড়ালছানাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তাদের পানির প্রতি মনোভাব গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। প্রাণী আচরণবিদ ক্রিস্টিন ভিতালে বলেন, ছোট বিড়াল যদি পানি-ঘেরা পরিবেশে বড় হয়, তবে তারা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পানিকে ভয় পাবে না। তবে বিপরীতে, যেসব বিড়ালছানা কখনো পানির কাছে যায়নি, তারা পানিকে হুমকি হিসেবে দেখতে পারে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিড়ালের পানির প্রতি ভীতি আসলে বংশগত, অভিজ্ঞতা ও সামাজিকীকরণের মিলিত প্রভাব।

বাহাতি হওয়ার কারণ

শুধু পানি নয়, বিড়ালের বাহাতি স্বভাব নিয়েও গবেষণা হয়েছে। প্রাণীবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের মতো বিড়ালেরও একটি প্রভাবশালী হাত বা থাবা থাকে। কিছু বিড়াল ডান থাবা দিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, আবার অনেক বিড়াল বাঁ থাবা দিয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ বিড়াল সাধারণত বাঁ-থাবা প্রভাবশালী (left-pawed বা "বাহাতি") হয়, আর স্ত্রী বিড়ালদের মধ্যে ডান-থাবা ব্যবহার বেশি দেখা যায়। আয়ারল্যান্ডের কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্টের গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, বিড়ালের থাবা  শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি তাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রামের কার্যকারিতার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন মানুষের ডান বা বাম হাতের প্রভাবশালী হওয়ার বিষয়টি।