টানা চারবার মেডিকেলে পেশাগত পরীক্ষায় প্রথম উমাইর আফিফ

‘আম্মুর স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন বানিয়ে নিয়েছি’

উমাইর আফিফ
উমাইর আফিফ © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজের চূড়ান্ত পেশাগত (প্রফ) পরীক্ষার ফলাফলে ঢাকা বোর্ডে প্রথম হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী উমাইর আফিফ। শুধু চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা-ই নয়, এর আগের তিনটি প্রফেও প্রথম হয়েছিলেন এই ক্ষুদে চিকিৎসক। ছিলেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যও। গত মে মাসে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুটি বিষয়ে অনার্স মার্কস  (৮৫%) অর্জন করেন উমাইর আফিফ। আগের তিনটি প্রফেও কমিউনিটি মেডিসিন ছাড়া বাকি সব বিষয়েই অনার্স মার্কস পেয়েছিলেন তিনি। আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ধারাবাহিক চারটি প্রফে আকর্ষণীয় সাফল্য এবং নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে সঙ্গে কথা বলেছেন উমাইর আফিফ, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নবাব আব্দুর রহিম

আপনার সাফল্য সম্পর্কে বলুন।
উমাইর আফিফ: ঢাকা বোর্ডের অধীনে যে ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সামে ঢাকা বোর্ডে আলহামদুলিল্লাহ প্রথম হয়েছি। কী সীমাহীন পরিশ্রম আর কষ্ট, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে ফিফথ ইয়ার শেষ করেছি আমার আল্লাহ সাক্ষী। আর বিগত যে প্রফেশনাল এক্সামগুলো ছিল; ফার্স্ট, সেকেন্ড এবং থার্ড—ওগুলোতেও আলহামদুলিল্লাহ ফার্স্ট পজিশন ছিল। প্রফেশনাল এক্সামগুলোতে সাবজেক্ট থাকে, সাবজেক্টগুলোতে ৮৫% এর উপর মার্কস থাকলে সেটাকে অনার্স বলে। এবার আমার অনার্স এসেছে সার্জারি এবং গাইনিতে। মেডিসিনে আসেনি। এর আগের তিনটা প্রফে বাকি সব সাবজেক্টগুলোতে অনার্স এসেছিল, শুধু কমিউনিটি মেডিসিনে আসেনি।

মেডিকেলে পড়াশোনার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?
উমাইর আফিফ: আসলে মেডিকেলে আসা আম্মুর ইচ্ছাতেই। ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আম্মুর ইচ্ছাতেই মেডিকেলে আসা। আমাদের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আশপাশেই। আব্বু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর এবং চট্টগ্রামের সিডিএ মসজিদের খতিব। এ ছাড়া তিনি ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের শরীয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রখ্যাত আলেমে দীন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে আব্বু চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) অধ্যাপক ছিলেন এবং চমেক হোস্টেলের মসজিদের খতিব ছিলেন। ফলে আমাদের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসেরই আশপাশে। সেখান থেকেই আম্মুর স্বপ্ন ছিল যে তার ছেলেমেয়েকে মেডিকেলে পড়াবেন।

আম্মু হাউজ ওয়াইফ, অনুপ্রাণিত হতেন ডা. সায়েবা আখতারকে (প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ) দেখে, যিনি একুশে পদকও পেয়েছেন। তিনি হচ্ছেন আমার বড় চাচি। বড় চাচা ডা. জাহাঙ্গীরসহ ফ্যামিলিতে আরও যারা ডাক্তার আছেন, তাদের দেখে আম্মু সব সময় আমাদের অনুপ্রাণিত করতেন মেডিকেলে আসার জন্য। সেজন্য মেডিকেলে আসা। এ ছাড়া এখানে এসে আম্মুর স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন বানিয়ে নিয়েছি।

ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুল ছিল কলেজিয়েট স্কুল। এর আগে প্রেসিডেন্সি স্কুলে ছিলাম, কলেজিয়েটে ফাইভ-সিক্স পড়ার পর ক্যাডেট কলেজে ক্লাস সেভেন থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। আর বোন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। ইন্টার্নশিপও শেষ করেছেন।

নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
উমাইর আফিফ: নিজের ক্যারিয়ারের কথা বললে এখনও ঠিক করিনি কোন ডিসিপ্লিনে যাব, মেডিসিন নাকি সার্জারি। তবে সেগুলো ইন্টার্নশিপে দেখার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ। তবে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই নিউরোমেডিসিন, নিউরোঅ্যানাটমি, নিউরোফিজিওলজি; এগুলোর প্রতি অনেক ঝোঁক ছিল।

আপনার ভবিষ্যত স্বপ্ন সম্পর্কে বলুন।
উমাইর আফিফ: ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আছে। বর্তমান সরকারের সময় যেসব সংস্কার কমিশন হয়, এর মধ্যে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনে আমাকে সদস্য করা হয়। সেদিক থেকে একদম বিভাগে বিভাগে, জেলায় জেলায়, বিভিন্ন উপজেলা সফরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যাগুলো আমরা দেখে এসেছি। আমাদের রিপোর্টে সেগুলো উল্লেখ করেছি এবং কী কী পলিসি চেঞ্জ আনা যায়, লং টার্ম, মিড টার্ম এবং শর্ট টার্ম; সেগুলো আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের কমিশনের রিপোর্টে সেগুলো আছে। সেদিক থেকে আসলে বাংলাদেশকে নিয়েই মূলত স্বপ্ন। বাংলাদেশের হেলথ সিস্টেম, হেলথ পলিসি—এগুলো নিয়ে কাজ করা এবং মেডিকেল এডুকেশন নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে।