উইকিপিডিয়ায় ভিপি সাদিক কায়েম
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:০৪
বর্তমান সময়ে আলোচিত নাম আবু সাদিক; যিনি সর্বাধিক পরিচিতি সাদিক কায়েম নামে। ডাকসুর নব নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি)। ছিলেন শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা। বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করেই নিবন্ধ প্রকাশ করেছে উইকিপিডিয়া। নিবন্ধে সাদিকের শৈশবকাল, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তার ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর জুলাই জাগরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে তোলা একটা ছবি দিয়ে নিবন্ধে উল্লেখ, মো. আবু সাদিক (সর্বাধিক পরিচিত সাদিক কায়েম নামে) একজন বাংলাদেশী ছাত্রনেতা ও ডাকসুর বর্তমান সহ-সভাপতি (ভিপি)। তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন। এছাড়াও সাদিক বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক।
শিক্ষাজীবন নিয়ে উইকিপিডিয়া বলছে, সাদিক কায়েম বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসায়, সেখান থেকে তিনি ২০১৪ সালে দাখিল পাস করেন। পরবর্তীতে বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (২০১৬) পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
রাজনৈতিক জীবনের অংশে লেখা হয়েছে, সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিবন্ধে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে সাদিককে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য, ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনে তিনি ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হন। এই নির্বাচনে সাদিক কায়েম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ৯ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ শেষে, পরের দিন সকালে প্রকাশিত ফলাফলে, তিনি ১৪০৪২ ভোট পেয়ে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদুল ইসলাম খান ৫৭০৮ ভোট পান।
পাহাড়ঘেরা খাগড়াছড়ি শহরের বাজার এলাকার সাদিক কায়েম। বাবা ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় সাদিক। ছোট এক ভাই ও এক বোন পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে সাদিকের মত ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদকের সংগৃহীত তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, পাহাড়ঘেরা খাগড়াছড়ি শহরের বাজার এলাকার সাদিক কায়েম। বাবা ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় সাদিক। ছোট এক ভাই ও এক বোন পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে সাদিকের মত ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে ‘সালমান’ ছদ্মনামে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সাদিক কায়েম। অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সংগঠকদের আশ্রয়, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় ও গণমাধ্যমে নয় দফা পৌঁছে দেওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডেও যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। যদিও সাদিকের ভাষায়, তার সংগ্রাম শুধু ৩৬ দিনের জুলায়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কৈশোর থেকেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এই জুলাইযোদ্ধা।
শাখা শিবির থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাদিক কায়েম ২০১৩ সালে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। মূলত ওই সময় থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন তিনি। নেতৃত্ব দিয়েছেন নিজ এলাকায় সংগঠিত নানা ঘটনা, আন্দোলন ও সংগ্রামের। পরে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। দোর্দণ্ডপ্রতাপে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনীর হাতে সাদিক কায়েমের রুমমেট সাকিব নিহত হয়। শিবিরের নিহত আরেক কর্মী আবিদও সাদিকের ঘনিষ্ঠ ছিলেন; তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে গেছেন সাদিক। এর মধ্যে আবিদের চোখ উপড়ে হত্যা করা হয়েছিল; যে গল্প এখনও ক্ষণে ক্ষণে নাড়িয়ে দেয় সাদিকের ভেতরটাকে।
মেধাবী সাদিক খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ সালে দাখিল এবং ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেন। দাখিলে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি। একই সাথে দুটি পরীক্ষাতেই বোর্ড বৃত্তি পেয়েছিলেন সাদিক। এরপর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন ডাকসুর এই নতুন মুখ। স্নাতকে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৭৮। এর মধ্যে প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৯৪ পেয়ে হয়েছিলেন প্রথম। ভালো ফলাফলের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রথম বর্ষে সেলিমা এমাজউদ্দিন স্কলারশিপ, দ্বিতীয় বর্ষে মিতসুবিসি স্কলারশিপ এবং তৃতীয় বর্ষে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক স্কলারশিপ পেয়েছিলেন সাদিক। এছাড়াও আরও ৩-৪টি স্কলারশিপ পেয়েছিলেন স্নাতকে ভালো ফল করার জন্য। মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও স্কলারশিপ পেয়েছিলেন তিনি।
ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের জড়িত ছিলেন সাদিক কায়েম। স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ভায়োলেন্স এরিহোয়্যারের (সেইভ) ফ্যাসিলিলেটর তিনি। এর মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল সাদিকের। এ ছাড়া ছিলেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ইনেশিয়েটিভের জেনারেল সেক্রেটারি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিজমের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন ব্যক্তি সাদিক। ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হওয়াদের পাশেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দাঁড়িয়েছেন সাদিক। এ ছাড়া আন্দোলনে কো-অপারেশন করা, হলে কোনো শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী হলে তাকে উদ্ধার করাসহ নানামুখী এক্টিভিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি।