বাড়ছে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের মিছিল, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
- ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:২৭
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এর মধ্যেও থেমে থাকেনি আওয়ামী লীগের নানা তৎপরতা। প্রথম দিকে বিপর্যয়ের ধাক্কায় কিছু সময় স্থবির থাকলেও পরবর্তীতে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন শুরু করে দলটি। শুরুতে এসব মিছিলে উপস্থিতি ছিল অল্পসংখ্যক কর্মীর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও আকার বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় আকারের মিছিল করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, মিছিলটি বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের নিচ থেকে শুরু হয়ে সংসদ ভবনের রাস্তা ধরে খামারবাড়ি গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অন্তত হাজারখানেক মানুষ অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ ফয়সাল বলেন, “হাজারখানেক লোক মেট্রোরেলের মোড় থেকে মিছিল শুরু করে খামারবাড়ির দিকে যেতে থাকে। তারা ‘শেখ হাসিনা’, ‘জয়বাংলা’, ‘শেখ হাসিনা আসবে, রাজপথ কাঁপবে’—এমন স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যায়।”
তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন জানান, “দুপুর পৌনে ২টার দিকে আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের পাশ থেকে মিছিল করে খামারবাড়ির দিকে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সিরাজুল ইসলামকে ব্যানারসহ আটক করেছে।”
মাদারীপুরের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এখানে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছে। দিন দিন মিছিল বড় হবে। এই অবৈধ সরকারের অধীনে কেউ ভালো নেই। কয়েক দিনের মধ্যেই সারা দেশের মানুষ রাজপথে নামবে।”
আরও পড়ুন: ঢাকায় ফের ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের মিছিল
এর আগের দিন (৬ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর তেজগাঁও নাবিস্কো এলাকায় ‘ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ’-এর ব্যানারে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিল করেন। তার আগে ৩১ আগস্ট ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড থেকে শংকরের বাংলাদেশ আই হসপিটাল পর্যন্ত মিছিল দেখা গেছে। এর সপ্তাহখানেক আগে গুলিস্তানের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটেও শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভে অংশ নেন।
অনেকে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মিছিল দিন দিন বড় হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন বলেন, “সকালে জিএমআই মোড় থেকে কিছু লোক বের হয়েছিল, আমরা মিছিল করতে দিইনি। তখন ছাত্রলীগের নিয়ামুল হাসান নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। দুপুরে আওয়ামী লীগের লোকজন নাবিস্কো থেকে আবারও বের হয়, আমরা তাদের ধরছি।”
তিব্বত মোড়ে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দুপুর ২টার দিকে কয়েক হাজার লোক শেখ হাসিনা, জয়বাংলা স্লোগান দিতে দিতে তিব্বতের দিকে মিছিল করেছে।”
মিছিলে থাকা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “ঘরে বসে থাকলেও বাঁচার সুযোগ নেই। তাই মিছিলের নির্দেশ পেয়ে লোকজন নিয়ে নেমেছি। আজকে উত্তর আওয়ামী লীগের মিছিলে বহু মানুষ এসেছে। এই অবৈধ সরকার কাউকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা মিছিল করেছি।”
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, রাজধানীসহ সারা দেশে ঝটিকা মিছিল রোধে নির্দেশনা রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত নাশকতার অনেককিছুই গোয়েন্দা তৎপরতায় ব্যর্থ হয়েছে। মিছিল ঠেকাতে ব্যর্থ হলেও পরবর্তী সময়ে ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা পুলিশের গতিবিধি অনুসরণ করে দ্রুত মিছিল শেষ করে চলে যায়, পরে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠনের তৎপরতা থামানো সম্ভব নয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে চিরকাল দাবিয়ে রাখা যায় না। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে বাকিদের স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ দিলে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ হবে।