সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগের জরিপ

ভিপি পদে মতামতহীন ৩৪ শতাংশ, সাদিক কায়েম ৩২%, আবিদ ৭%

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’র জরিপ
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’র জরিপ © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী সাদিক কায়েম এগিয়ে রয়েছেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ এর এক জরিপে এমন দাবি করা হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সাদিকের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থীর। আর স্বতন্ত্র ২২ এবং ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খানকে ৭ শতাংশ সমর্থন করেন।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ডাকসু নির্বাচন সার্ভের ফলাফল তুলে ধরেন সোচ্চার স্টুডেন্টস’ নেটওয়ার্ক ঢাবি চ্যাপ্টার’র সদস্য আদিবা রহমান।

ফলাফল অনুযায়ী, নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী সাদিক কায়েম। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৩২ শতাংশ মনে করেন সাদিক কায়েম ভিপি পদে জয়ী হবেন। ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান জয়ী হবেন বলে মনে করেন ৭ শতাংশ ভোটার। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে রয়েছেন ২২ শতাংশ। আর ৩৪ শতাংশ ভোটার এ বিষয়ে মত জানাতে রাজি হননি। 

ভিপি পদে মতামত না জানানো ভোটারদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৫৪ শতাংশ। আর পুরুষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ হার ২৪ শতাংশ। গত ১ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ও প্যানেল ঘোষণার আগেই এ জরিপ করা হয়েছে। এতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৮৪ শতাংশ ডাকসুতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলেও জানিয়েছেন। যদিও প্রায় ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন না নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। ছাত্রদের মধ্যে এর হার ৮২ শতাংশ। আর নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে পারবেন বলে মনে করছেন ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট শিব্বির আহমদের নেতৃত্বে হওয়া জরিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর ফলাফল অনুযায়ী, প্যানেলের তুলনায় যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিতে চান ৮২ শতাংশ ভোটার। ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছেন, ব্যক্তিগত পরিচয় মূখ্য নয়, তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। নেতা হওয়ার জন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া জরুরি বলেও মনে করছেন তারা। 

মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করে সোচ্চার

এ ছাড়া পুরুষদের তুলনায় নারী ভোটাররা এটিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। আর ৫৮ শতাংশ ভোটার ব্যক্তিজীবনে অ্যাকাডেমিক ও অ্যাক্টিভিজমে ভালো সমন্বয় করা প্রার্থীদের গুরুত্ব দিবেন। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর মধ্যে সততা, ভালো সংগঠক, ধার্মিক, প্রগতিশীল, গুড সেন্স অব হিউমার এবং জুলাই আন্দোলনে ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে চান ভোটাররা। আর ব্যক্তিত্বহীন, মাদকাসক্ত, মিথ্যাবাদী, যৌন কেলেঙ্কারি আছে, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ছাত্র নির্যাতনে জড়িত, ধর্মবিদ্বেষী ও বদমেজাজিদের ভোট দেবেন না তারা।

আরও পড়ুন: ঢাবির ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার: জরিপ

সোচ্চারের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছেলেদের মধ্যে এর পরিমাণ ৫৮ শতাংশ। এ ছাড়া স্বচক্ষে অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন ৬৯ শতাংশ। ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৮১ শতাংশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আর জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে পারবেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডাকসু প্রতিনিধিদের কাছে শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাগুলো হচ্ছে—গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ‍ও নির্যাতনমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, বহিরাগতদের আনাগোনা কমানো, আবাসন ও খাদ্য সংকট দূরীকরণ, অ্যাকাডেমিক পরিবেশ উন্নীতকরণ এবং শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক প্রতিনিধিত্ব, যেখানে দলের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য পাবে।

দুনিয়ার কোথাও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নির্যাতিত হওয়ার এমন নজির নেই জানিয়ে সোচ্চারের প্রেসিডেন্ট শিব্বির আহমদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোচ্চারের করা জরিপে উঠে এসেছে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ছেলেদের মধ্যে এর পরিমান ৫৮ শতাংশ। ছেলেদের হলগুলোয় নির্যাতনের ভয়াবহতা কত ছিল এটার ধারণা পাওয়া যাবে এখানে। স্বচক্ষে অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছে ৬৯ শতাংশ। ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৮১ শতাংশ। দুটো কম্বাইন্ড করে অ্যাক্টিভলি বা প্যাসিভলি নির্যাতিত হয়েছে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

তিনি আরো বলেন, জরিপের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং পছন্দ-অপছন্দগুলো উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্যাতনমুক্ত ক্যাম্পাস ও গণরুম-গেস্টরুম কালচারমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মনে করে যে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করা সম্ভব। ডাকসু নিয়মিত হোক এবং দলের উর্ধ্বে ছাত্রছাত্রীরা প্রাধান্য পাক এটাও তাদের একটা চাওয়া।