ডাকসু সংগ্রহশালায় নেই ডাকসু সংক্রান্ত কোনো বই
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু হয় ডাকসু সংগ্রহশালার। যেটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) 'মিনি জাদুঘর' বলা হয়ে থাকে। ডাকসু সম্পর্কিত বেশকিছু সাময়িকী বা তথ্যের সমাহার থাকলেও এ সংক্রান্ত কোনো বই এতে নেই। এমনকি এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কোনো ব্যক্তি এ সংশ্লিষ্ট উদ্যোগও গ্রহণ করেননি। তাছাড়াও, নামে ডাকসু সংগ্রহশালা হলেও এতে ডাকসু সংক্রান্ত তথ্যাদির স্বল্পতাও দেখা গেছে, পাশাপাশি এতে নেই কোনো ডিজিটাল আর্কাইভিং সিস্টেম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডাকসু নিয়ে উৎসব ও উন্মাদনার মাঝে এ কেন্দ্রিক বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য এখানে এসে হতাশ হচ্ছেন অনেকে। এ বিষয়ে বিশিষ্টজনেরাও জানাচ্ছেন উদ্বেগ।
সরেজমিনে ডাকসু সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১৮৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশের মুদ্রা, দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র, পুস্তক, কোলাজ পদ্ধতির পোস্টার, পত্রিকা কাটিং, ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ছবি, বিভিন্ন সময়ের ছাত্র নেতা, রাজনীতিবিদ, শহীদ, শিক্ষাবিদ, দার্শনিকদের ছবি সংরক্ষিত আছে।
এছাড়াও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার আমগাছের ধ্বংসাবশেষ, ভাষাসৈনিকদের মুদ্রিত সাক্ষাৎকার, ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক পোস্টার, মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসংবলিত ছবি, গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, প্রচারপত্র, স্মারকলিপি ইত্যাদি ডাকসু সংগ্রহশালায় রয়েছে।
ইতিহাস বলছে, দেশের শিক্ষা, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যায়তনটির রাজনৈতিক অর্জন-অবদানও কম নয়। আর নেতা তৈরির আঁতুড় ঘর বলা হয় ডাকসুকে। ডান, বাম, মধ্যপন্থা— সব দলেই ডাকসুর সাবেক নেতাদের সক্রিয়-সগৌরব অংশগ্রহণ রয়েছে। ১০৪ বছর বয়সী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ তথা ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ৩৭ বার। এর মধ্যে ২৯ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। আবার স্বাধীনতার ৫৩ বছরে হয়েছে মাত্র ৮ বার।
ভাষা আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন দুর্যোগের মতো দেশের নানা ক্রান্তিলগ্নে জাতির দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন ডাকসুর প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ- দেশের ইতিহাসের সব টার্নিং পয়েন্টের সঙ্গে ডাকসুর রয়েছে গভীরতর সম্পর্ক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ডাকসুর ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কোনো ব্যক্তি এ কেন্দ্রিক কোনো বই লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক স্বপন কুমার দাস দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একসময় ডাকসুর প্রতিনিধিরা দেশের শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া ডাকসু ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্ন বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জাতির পাশে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। একসময় ঢাবির শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের পদচারণায় মুখর থাকত এ ডাকসু। বহুজাতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে এখান থেকে। অথচ শতবর্ষ পার হয়ে গেলেও ডাকসু নিয়ে কোনো বই নেই, যা খুবই দুঃখজনক। এ সময় তিনি নিজেই এ সংক্রান্ত একটি বই প্রস্তুতের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ইমদাদুল হক বলেন, ডাকসু সংগ্রহশালা এখন প্রায় মৃত। সেখানে ডাকসু সংক্রান্ত বইপত্র, দলিল বা পোস্টার নেই বললেই চলে। ডিজিটাল আর্কাইভিং বা ক্যাটালগিংয়ের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। ইতিহাস সংরক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ উদাসীনতাই সবচেয়ে হতাশাজনক দৃষ্টান্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি মনে করি, ডাকসু সংগ্রহশালায় যত ধরনের বই ও তথ্য-উপাত্ত থাকার কথা ছিল, সেগুলোর সবই এখানে থাকা উচিত। এতদিন পর্যন্ত ডাকসুর সংগ্রহশালায় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা হয়তো চেষ্টা করেছেন এ বিষয়ে ডাকসু সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করার, কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক প্রত্যাশা অনুযায়ী তা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এখন বা ভবিষ্যতে যারা ডাকসু সংগ্রহশালা দায়িত্বে আছেন বা থাকবেন, তারা এ ব্যাপারে সতর্ক হবেন বলে আমি মনে করি। দেশ, জাতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ডাকসুর কনট্রিবিউশন সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত ও বই নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে কাজ করে ডাকসু সংগ্রহশালাকে আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা করছি।