স্কুল জীবনে হারিয়ে যাওয়া ওয়ালেট ফিরে পেলেন ৫১ বছর পর!
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১১
ছোট ছোট জিনিসপত্র কখনও কখনও আমাদের স্মৃতিকে জাগ্রত করে তোলে। নিমিষেই টাইম ট্রাভেলে শৈশবকে ফিরিয়ে আনে। অন্টারিওর স্টোনি ক্রিকের অর্চার্ড পার্ক সেকেন্ডারি স্কুলে সম্প্রতি এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৪ সালে হারানো একটি ওয়ালেট ৫১ বছর পর আবার ফিরে এসেছে তার প্রাপকের কাছে। নির্মাণকর্মীরা স্কুলের বাথরুম সংস্কারের সময় যখন একটি দেয়াল ভেঙে দিচ্ছিলেন, তখনই তাদের চোখ পড়ল এক অদ্ভুত কিছুর ওপর—একটি পুরনো ওয়ালেট, যা বছরের পর বছর দেয়ালের পেছনে লুকিয়ে ছিল। ওয়ালেটটি টম শফপ-এর, যিনি ১৯৭৪ সালে ১৭ বছরের ছাত্র ছিলেন।
ওয়ালেটের ভিতর মিলল তার স্টুডেন্ট আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সোশ্যাল ইনসিওরেন্স কার্ড, পরিবারের ও বন্ধুদের ছবি, ইউরেইল ট্রানজিট পাস, একটি কানাডিয়ান ডিস্টিলারির প্রাইস লিস্ট এবং হকি খেলার একটি ৩৫ সেন্টের টিকিট। প্রতিটি জিনিসপত্র যেন সময়ের ভ্রষ্টচারণাকে ধারণ করে রেখেছিল।
স্কুলের পরিচারিকা লরনা ম্যাককুইন বলেন, ‘এমন কিছু পাওয়া, যা এমন সময়ের যে আমরা জন্মেও নিইনি, তা সত্যিই রোমাঞ্চকর। আমরা ভাবলাম, ‘এই লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং ওর কাছে ফেরত দিতে হবে। ৫০ বছর পর সে নিশ্চয়ই চাইবে।’ ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের খোঁজে মিলল এখন ৬৭ বছর বয়সী শফপকে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, এটি কোনো মজার ঘটনা—কেননা সোশ্যাল ইনসিওরেন্স কার্ড ও জন্মনিবন্ধনও ওয়ালেটের মধ্যে ছিল। কিন্তু পরে তিনি নিজের প্রাচীন স্মৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য স্কুলে আসেন।
শফপ বলেন, ‘ওয়ালেটের জিনিসপত্র খুঁজে দেখে যেন আমি নিজেকে অতীতের এক ভ্রমণে পেলাম। বিশেষ করে ছবিগুলো—আমার শৈশবের বাড়ির ছবি—যেখানে এখনও মা থাকেন। আমি ছবি দেখাতে গিয়ে মাকে দেখালাম, আমরা একসঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করেছি।‘ এই দীর্ঘদিনের খোঁজে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো, কেন ওয়ালেটটি এত বছর ধরে লুকিয়ে ছিল। শফপ এবং ম্যাককুইন একমত, সম্ভবত ওয়ালেটটি তিনি বাথরুমে ফেলে দিয়েছিলেন, অন্য কেউ নগদ টাকা বের করে দেয়ালের পেছনে সিলিং টাইলের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। আর সেখানে আটকে থেকে সময়কে পেরিয়ে প্রাপকের কাছে ফিরে এসেছে।
শফপের এই কাহিনী এক ধরনের পুনরাবৃত্তির মতো মনে করিয়ে দেয় ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার শ্যারন ডে-এর কথা, যিনি ১৯৬৮ সালে হারানো ওয়ালেট ৫৪ বছর পর ফিরে পান। সময়, ইতিহাস এবং ব্যক্তিগত স্মৃতির মধ্যে এই ছোট্ট জিনিসগুলো যেন একটি মানবিক গল্প বুনে যায়—একটি ক্ষুদ্রতম জিনিসও যে কত গভীর আবেগ ও গল্পের ধারক হতে পারে, তা প্রকাশ করে।
শফপ বলেন, ‘এটা আমার জীবনের এমন এক মুহূর্ত, যা কখনো ভোলা যাবে না। ৫১ বছর পরে নিজের অতীতের সঙ্গে এই সাক্ষাৎ সত্যিই অসাধারণ।’এই ওয়ালেট শুধু একটি হারানো জিনিস নয়, এটি অতীতের স্মৃতি, মানবিক সংযোগ এবং সময়ের অদ্ভুত চক্রের এক ছোট্ট প্রতীক।
সংবাদসূত্র: ইউপিআই