একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা, ভিন্ন কোডের কারণে বঞ্চিত ট্রেড ইনস্ট্রাক্টরের নিবন্ধনধারীরা

এনটিআরসিএ ও সেসিপ লোগো
এনটিআরসিএ ও সেসিপ লোগো © ফাইল ছবি

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও কোড ভিন্ন থাকার কারণে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন ট্রেড ইন্সট্রাক্টরের নিবন্ধনধারীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। শিক্ষক নিয়োগে এই বৈষম্য অবসানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বঞ্চিত ট্রেড ইনস্ট্রাক্টররা।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের এমপিও নীতিমালায় ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের জন্য আলাদা দুটি কোড (৫২ ও ৫৩) নির্ধারণ করা হয়। কোড ভিন্ন হলেও উভয় কোডের প্রার্থীদের একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। পরীক্ষা শেষে সনদে বিভাজন আনা হয়—একটি সনদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য, অপরটি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য।

ভুক্তভোগী ট্রেড ইনস্ট্রাক্টরদের অভিযোগ, তাদের মাউশিভুক্ত সনদ অনুযায়ী সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) অল্প সংখ্যক পদের চাহিদা দিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও ভুল চাহিদা দিয়েছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬৪ জন প্রার্থীর বিপরীতে শূন্যপদ ছিল মাত্র ৭টি। ফলে উচ্চ নম্বর পেলেও অনেক যোগ্য প্রার্থী সুপারিশ পাননি।

অন্যদিকে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরভুক্ত সনদধারীরা অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পেরেছেন। তাদের সনদে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর যোগ্যতা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা সুপারিশ পেয়েছেন। কিন্তু মাউশিভুক্ত সনদধারীরা নিজেদের সনদে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানে আবেদনের সুযোগ পাননি।

কৃষ্ণকলি নামে ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বেশি মার্ক পেয়েও বঞ্চিত হয়েছি। অথচ যারা কম মার্ক পেয়েছে, তারাই শুধু কোড ভিন্ন থাকার কারণে সুপারিশ পেয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আমার চেয়ে ১৫ নম্বর কম পেয়ে একজন শিক্ষক হয়েছেন। আমি অধিক নম্বর পেয়েও সুপারিশ পাইনি। বিষয়টি সমাধানে এনটিআরসিএ এবং সেসিপে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সমাধান দেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সনদ সনদ আলাদা, সেহেতু সেসিপের উচিত ছিল আলাদা করে চাহিদা পাঠানো। তবে তারা সেভাবে চাহিদা দেয়নি। এর ফলে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। আসন্ন বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আমাদের জন্য আলাদা করে চাহিদা দিতে হবে। অথবা শুধুমাত্র সেসিপের জন্য আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেসিপের যুগ্ম পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এনটিআরসিএ যদি বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাহলে ট্রেড ইনস্ট্রাক্টরের নিবন্ধনধারীদেরকে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ শূন্য পদ থাকার পরও কেন চাহিদা দেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাহিদা পাঠানোর কাজটি আমাদের উপপরিচালক করে থাকেন। আপনি একটু তার সঙ্গে কথা বলুন।’

জানতে চাইলে সেসিপের উপ-পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘এনটিআরসিএ ট্রেড ইনস্ট্রাক্টরদের সার্টিফিকেট আগে একভাবে দিত। তবে হঠাৎ করেই তারা পূর্বের সেই নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অবগত করা হয়নি। আমরা কোনো প্রার্থীকে বিপাকে ফেলতে চাইনি। আমরা চেয়েছি, প্রার্থী যোগদানের পরের মাসেই যেন এমপিওভুক্ত হতে পারে। ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতেও কিন্তু এ নিয়ম ছিল না। ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে হঠাৎ করেই নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এমপিও নীতিমালায় পরিবর্তন এনে আগের নিয়মে সার্টিফিকেট দিলেই প্রার্থীদের সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এনটিআরসিএ চাইলে ট্রেড ইনস্ট্রাক্টদের বর্তমান সার্টিফিকেট বাতিল করে আগের নিয়মে সার্টিফিকেট দিতে পারে। এটি করা হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমরা আলাদা করে চাহিদা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। এমনকি সার্টিফিকেটের এই ইস্যু বহাল রেখে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও আমাদের চাহিদা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সেসিপ চাহিদা না দিলে আমাদের সুপারিশের সুযোগ নেই। আর এমপিও নীতিমালায় যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই সনদ দেওয়া হয়েছে; সুপারিশও করা হয়েছে। আমাদের নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে সেসিপভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ নিয়ে সমস্যা হলে, আমরা সেসিপের সঙ্গে সভা করবো। তাদের সঙ্গে সভা করে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’