‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা
- ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জমিদারিপ্রথা বিলুপ্ত থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সাম্প্রতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। অথচ গত ৩৪ বছর, বিশেষত ১৭ বছরে শিক্ষার্থীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে দমন-পীড়নের ঘাঁটি। আমরা চাই এমন ডাকসু, যারা ক্ষমতাসীনদের চোখে চোখ রেখে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করবে, স্বৈরতন্ত্র ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল ঘোষণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মানোন্নয়নপূর্বক একে একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণতকরণ এবং এর রাজনৈতিক স্বাধীনতা হবে আমাদেরএক নম্বর অগ্রাধিকার। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একমাত্র পরিচয় হবে স্টুডেন্ট। ধর্ম-বর্ণ জাতির সাপেক্ষে কাউকে বৈষম্য করা বা মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভাবে রাজনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারতান্ত্রিক ও ক্যাডারভিত্তিক। তাই প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন আয়োজন আমাদের অন্যতম এজেন্ডা।’
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেলের ইশতেহার
রাজনৈতিক
>> নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।
>> অস্ত্র-সন্ত্রাস, ক্যাডার রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির মহড়া বন্ধ করা হবে।
>> জীবন, জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক নাগরিক তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা হবে।
>> হল ও ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক কাঠামো বন্ধ করা হবে।
>> জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিচার করা হবে।
>> ১৯৪৭, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রক্ষা করা হবে।
>> ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার, আগ্রাসন ও আধিপত্যবিরোধী আন্দোলনের ধারা বজায় রাখা হবে।
একাডেমিক ও প্রশাসনিক
>> ’৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক সংস্কার নিশ্চিত করা হবে।
>> ভিসি, প্রোভিসি, প্রভোস্টসহ পদগুলোতে স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন।
>> ওয়ান-স্টপ সলিউশন অ্যাপস চালু: ভর্তি, রেজাল্ট, এডমিট, বেতনসহ সকল সেবা অনলাইনে।
>> লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Moodle/Blackboard/Google Classroom) সম্প্রসারণ।
>> ডিজিটাল ক্লাসরুম, আধুনিক ল্যাব ও হল ল্যাব সচল করা হবে।
>> Teacher’s evaluation ও শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক ব্যবস্থা চালু।
>> চাকরি প্রস্তুতির জন্য ১০ তলা স্টাডি স্পেস ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা।
>> দলীয় প্রভাবমুক্ত শিক্ষক নিয়োগ, ডেমো ক্লাস ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ীকরণ।
>> ক্রেডিট ট্রান্সফার, যৌথ ডিগ্রি, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ও স্কলারশিপ নিশ্চিত করতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে MOU।
>> শিক্ষকদের রিসার্চ আউটপুট প্রকাশ ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন।
>> পূর্ণকালীন অনুষদভিত্তিক পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু ও আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নালে সহজ অ্যাকসেস।
>> ক্যাম্পাসে আলো ও সিসিটিভির মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার।
>> গেস্টরুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত করে FNF Centre (Friends & Family) নামকরণ, ট্রমা হিলিং উদ্যোগ।
>> রাষ্ট্র কর্তৃক বেদখল হওয়া ৩০০ একর জমি আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হবে।
স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার
>> One Card, All Service: লাইব্রেরি, স্বাস্থ্য, পরিবহন, ক্যান্টিন ও হল প্রবেশাধিকার নিশ্চিত।
>> One Student One Seat: সিট বণ্টনে স্বচ্ছ নীতিমালা, অতিরিক্ত এলোকেশন বন্ধ, সিট না পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তুকি।
>> প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে সিট নিশ্চিত; *স্নাতকোত্তর রেজাল্টের এক সপ্তাহ পর সিট ছাড়তে হবে।
>> শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু; সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে/৫০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা।
>> প্রতিটি হলে মেডিকেল অফিসার ও Sick Room; ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টার ফার্মেসি।
>> মেডিক্যাল সেন্টার আধুনিকায়ন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও ট্রমা সেন্টার চালু।
>> সব শিক্ষার্থীর জন্য ল্যাপটপ নিশ্চিতে সুদবিহীন লোন।
>> ঢামেক ও পিজি হাসপাতালের সাথে MoU, জটিল রোগের চিকিৎসায় বিশেষ সুরক্ষা।
>> Student Dignity
>> দাড়ি-টুপি, বোরকা-হিজাবসহ পোশাক ও আঞ্চলিকতাকেন্দ্রিক Moral Policing বন্ধ
ভিন্নধর্ম, জাতিসত্তা ও মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য রোধ।
ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি
>> স্টারলিংয়ের মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাসে হাই-স্পিড ইন্টারনেট।
>> সব একাডেমিক ভবন ও হলে এডুরোম ফ্রি ফাস্ট ইন্টারনেট।
>> পরিবহন।
>> ভাড়ায় চালিত পরিবহনের পরিবর্তে নিজস্ব বাস সার্ভিস।
>> পৃথক চক্রাকার বাস সার্ভিস: বিকাল ৫টা পর্যন্ত আউট ট্রিপ, রাত ১০টা পর্যন্ত ইন ট্রিপ।
>> খাবার ও ক্যান্টিন
>> One Card All Service কার্ডে খাবার অ্যাকসেস।
>> ডাকসু ও টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার ভর্তুকি ও মানোন্নয়ন, যৌক্তিক মূল্য।
>> সোশ্যাল সায়েন্স, মোকাররম, কাজী মোতাহর হোসেন ভবনে ক্যান্টিন।
>> লাইব্রেরি ও ডাটা সেন্টার।
>> সেন্ট্রাল ও সায়েন্স লাইব্রেরি আধুনিকায়ন।
>> অনুষদভিত্তিক লাইব্রেরি ও ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি সেবা।
>> ই-লাইব্রেরি চালু।
>> এফবিএস ডাটা সেন্টার সচল ও নিজস্ব ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা।
ক্যারিয়ার ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট
>> কেন্দ্রীয়ভাবে ক্যারিয়ার ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সিলেকশন, গ্রুমিং এবং খণ্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।হলে হলে আউটসোর্সিং ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে শিক্ষার্থীরা হলে বসে আয় করতে পারে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার পরেই শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক বেসিক কোর্সের (পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল, পাবলিক স্পিকিং) ব্যবস্থা করা।
বিজনেস ও উদ্যোক্তাদের জন্য হাব তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা প্লানিং এবং উদ্যোক্তা হতে সহযোগিতা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বিভিন্ন Workplace গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য নূন্যতম এক হাজার খণ্ডকালীন বা পার্টটাইম চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
অ্যালামনাই অ্যাসোশিয়েসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে শিক্ষার্থী বান্ধব করা হবে।
কালচারাল ও স্পোর্টস
>> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে মিউজিয়াম এবং কালচারাল সেন্টার তৈরি করা হবে।
>> ১৮টি হলের টিভি রুমকে আধুনিক করে mini cineplex করা হবে। আর একটা সেন্ট্রাল সিনেপ্লেক্স করা হবে।
>> আধুনিক গেইমসরুম এবং জিমনেসিয়াম স্থাপন করা হবে।
>> সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবো, হলভিত্তিক খেলার মাঠগুলোকে সংস্কার করবো এবং খেলার মাঠগুলো স্টুডেন্টদের জন্য সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবো। ডিবেটিং ক্লাব, গবেষণা ক্লাবসহ অন্যান্য কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস সম্পর্কিত ক্লাবগুলোকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
>> টিএসসিভিত্তিক ক্লাবগুলা কোন রাজনৈতিক দলের অধীনে যাবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি, সেক্রেটারি নিয়োগ হবে।
নারী
>> নারী হলগুলোতে sports facilities বৃদ্ধি। আধুনিক ইনডোর গেইম ও জিমনেসিয়াম প্রতিস্থাপন।
>> বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হবে যাতে যেকোন হলে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক রেস্পন্স করা যায়। বিশেষ করে কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা হল এবং সমাজকল্যাণ এরিয়াতে ২৪ ঘন্টা এম্বুলেন্স সার্ভিস নিশ্চিত করা হবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, সেন্ট্রাল মসজিদ সহ অন্যান্য জায়গায় মেয়েদের নামাজের স্থান প্রসারিত করা হবে।
>> অনাবসিক মেয়েদের হলে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপরিসর বা কমন স্পেসগুলো নারীবান্ধব করা হবে।
>> নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার বুলিং থেকে রক্ষা করতে ‘বিশেষ সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হবে।
>> নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি লিঙ্গভিত্তিক যেকোনো ধরনের বৈষম্য, হয়রানি দূর করে সমান এবং মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে (শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অধিকারকর্মীদের সন্নিবেশে) সমতা নিশ্চয়ন কমিটি গঠন করবো।
আইনি সহায়তা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে আইনী সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করার লক্ষ্যে ‘লিগ্যাল সাপোর্ট সার্ভিস’ চালু করা হবে।