চলনবিল ধ্বংস করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণে আপত্তি বাপার
- ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫৯
চলনবিলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে চলনবিলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণ না করার দাবি তুলে ধরেন বাপা ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও ‘চলনবিল রক্ষা আন্দোলন’ এর সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলন বিলের একদিকে পদ্মা, অন্যদিকে যমুনা। বর্ষাকালে এ দুই নদীর কূল উপচানো পানি এ বিলে সঞ্চিত হয়। ফলে বন্যার প্রকোপ হ্রাস পায়। শীতকালে বিলের পানি নদীতে গড়ায় এবং প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তীরবর্তী পদ্মা ও যমুনা ছাড়া এ বিলের অভ্যন্তরে রয়েছে আত্রাই, বড়াল, নন্দকুজা, গুমানীসহ ৪৭টি নদী, ১৬৩টি বিল, ৩০০টির বেশি খাল, ১ লাখ ২০ হাজার পুকুর এবং কয়েকটি বড় বড় পাথার। এইসব নদী, খাল, পাথার, দীঘি, পুকুরের সমাহারে চলনবিলে যে পানির সমাবেশ, সেটাই এই বিলের প্রাণ-প্রকৃতির উৎস ও সৌন্দর্য।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০৫ প্রজাতির দেশি মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, সাত প্রকারের উভয়চর প্রাণী, ৩৪ প্রজাতির পাখি, অসংখ্য প্রকারের জলজ ও স্থলজ উদ্ভিদ এবং জলজ প্রাণীর উপস্থিতিসহ জীববৈচিত্র্যময় এই চলনবিল শুধু উত্তরাঞ্চলের জন্য নয়, সারা দেশেরই অমূল্য সম্পদ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চলনবিলের ওপর প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ নির্ভর করে। সুতরাং এখানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে পুরো জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে এবং স্থানীয় জনসাধারণের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজে একজন আইনের শিক্ষক হয়ে কীভাবে আইন ভঙ্গ করতে পারেন। বুড়ি পোতাজিয়াতে ১০০ একর জমি বালু দিয়ে ভরে নদীকে সংকুচিত করার পরিকল্পনা স্পষ্টই আদালতের নদী বিষয়ক রায়ের বিরোধী এবং ২০১৩ সালের পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ এই আইনের ২০ নম্বর ধারা পরিষ্কারভাবে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্তকারী কাঠামো নির্মাণের বিরুদ্ধাচারণ করে।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আরও আগেই করা উচিত ছিল, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় চাই, কিন্তু কোনোভাবেই চলনবিল ধ্বংস করে দেশের সর্ববৃহৎ গোচারণ ভূমি বিনষ্ট করে নয়। এই চলনবিলের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। দেশের মাছ ও দুধের চাহিদার একটি বড় অংশ এ বিল থেকে আসে। আমরা আশা করি সরকার আমাদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত হয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য বিকল্প স্থান নির্ধারণ করবেন।’