বিশ্বে প্রথমবারের মতো এইডসের টিকা আনতে যাচ্ছে রাশিয়া

প্রতিকী ছবি
প্রতিকী ছবি © সংগৃহীত

বিশ্বে প্রথমবারের মতো এইডসের (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) টিকা আনতে যাচ্ছে রাশিয়া। বুধবার (২৭ আগস্ট) দেশটির চিকিৎসা ও অণুজীববিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ন্যাশনাল সেন্টারের তরফ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়। তাঁরা জানিয়েছে ২০২৭ সালের মধ্যে বাজারে টিকাটি নিয়ে আসতে পারবে। বিভিন্ন দেশ এইডসের টিকা তৈরির প্রকল্প হাতে নিলেও, এখন পর্যন্ত কেউই সফল হতে পারেনি। তাদের এই প্রকল্প সফল হলে এটি হবে বিশ্বে এইডসের প্রথম কার্যকর টিকা। 

রাশিয়ার গামালিয়া ন্যাশনাল সেন্টার বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জীবাণু গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যারা প্রথম করোনার টিকা আবিষ্কার করেছিল। স্পুটনিক ৫ নামের সেই টিকার প্রতিরোধী সক্ষমতা ছিল ৯৭ শতাংশেরও বেশি। বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে করোনা মহামারি মোকাবিলায় এ টিকা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ এই সংস্থাটি ইতোমধ্যে টিকা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী দুবছর বা তারও কম সময়ের মধ্যেই এই টিকা বাজারে আসতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির মহামারিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ভ্লাদিমির গুশচিন বুধবার এক সাক্ষাৎকারে রিয়া নভোস্তিকে বলেন, এই টিকা তৈরিতে সর্বাধুনিক এমআরএনএ (ম্যাসেঞ্জার রাইবো-নিউক্লিয়িক অ্যাসিড) প্রযুক্তি অনুসরণ করা হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে টিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে মৃত বা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত জীবাণু ব্যবহার করা হয়। তবে এমআরএনএ প্রযুক্তিতে এক ধরনের প্রোটিন ব্যবহার করা হয়, যা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কোনও নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহের সহজাত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বহুগুণ শক্তিশালী করে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮১ সালে। ওই বছরই দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচআইভি শনাক্ত করে। অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক বা অন্যের ব্যবহৃত সিরিঞ্জের সুঁচের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে থাকে। এছাড়া, প্রসূতি মায়ের মাধ্যমেও শিশুর দেহে এই ভাইরাস যেতে পারে।

সাহারা ও নিম্ন আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যান এইডসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ। ২০১০ সালের পর থেকে অবশ্য বিশ্বজুড়ে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ, যা ২০১০ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম।

উল্লেখ্য, হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাস বা এইচআইভির সংক্রমণে এইডস হয়। এই ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে, একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। এইচআইভি সংক্রমণের পরবর্তী অবস্থাকেই এইডস বলা হয়।


সংবাদসূত্র: রাশিয়া টুডে