পদোন্নতি পেয়ে বিসিএস ক্যাডারের সমমান হচ্ছেন ডিপ্লোমাধারীরা
- ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩৫
কেবলমাত্র ডিপ্লোমা পাসের সার্টিফিকেট নিয়ে বিসিএস ক্যাডারদের সমান মর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন ডিপ্লোমাধারীরা—এমন অভিযোগ তুলেছেন বিএসসি প্রকৌশলীরা। তাদের দাবি, এর ফলে প্রকৌশলী পেশায় বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার পর চার বছর মেয়াদি কোর্স করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ হন। ডিপ্লোমা শেষ করার পরই তারা সরাসরি ১০ম গ্রেডে নিয়োগ পান। এরপর পাঁচ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সহজেই ৯ম গ্রেডে উন্নীত হন। অথচ প্রকৌশল পেশায় ৯ম গ্রেড মূলত বিসিএস উত্তীর্ণ সহকারী প্রকৌশলীদের জন্য নির্ধারিত।
অন্যদিকে, একজন বিএসসি প্রকৌশলীকে প্রথমে এসএসসি শেষে উচ্চমাধ্যমিকে পড়তে হয়। এরপর কঠিন প্রতিযোগিতার ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চার থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। শুধু তাই নয়, বিসিএস পরীক্ষার মতো কঠিন প্রতিযোগিতা পার করে তবেই তারা ৯ম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলীর পদে যোগ দিতে পারেন। বিএসসি প্রকৌশলীরা অভিযোগ করে বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কেবল এইচএসসি সমমানের যোগ্যতা নিয়ে বিসিএস ক্যাডারদের সমান মর্যাদা পাচ্ছেন। এটি তাদের প্রতি অন্যায় এবং প্রকৌশল পেশার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে।
চুয়েটের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ ইকবাল বলেন, ‘এসএসসির পর পলিটেকনিক থেকে ৩-৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করে যারা বের হচ্ছেন, তাদের মাধ্যমে দেশের প্রকৌশল সেক্টরের প্রায় সম্পূর্ণটা দখল হয়ে আছে। শুধু পেশিশক্তি, লবিংসহ নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে প্রকৌশলীদের পদগুলো ডিপ্লোমাধারীরা দখল করে নিচ্ছে। আগে তাদের টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, সার্ভেয়ার, ড্রাফটসম্যান, মেশিন অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতো। অথচ আন্দোলন করে এইচএসসির মান নিয়ে তারা এখন বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য চাকরিতেও পদোন্নতির মাধ্যমে ৯ম গ্রেড বা তার ওপরের পদে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে পড়ালেখার মান একই। প্রকৌশলী পেশার ক্ষেত্রে বিষয়টি পুরোই ভিন্ন।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক মো. সাকিবুল হক লিপু দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কোনো প্রকার বিসিএস না দিয়েই, প্রিলি, রিটেন, ভাইভাতে না বসে গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, কারিগরি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরগুলোয় কেবল প্রমোশনের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাচ্ছেন ডিপ্লোমাধারীরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘৯ম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের জন্য বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার চেয়ে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে, ডিপ্লোধারীরা মামলা করেন প্রমোশনের জন্য। এতে বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার না পেয়ে ডিপ্লোমাধারীদের ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্ব দিয়ে দেয়। এসব অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।’
ডিপ্লোমাদের বক্তব্য
ডিপ্লোমা পাস করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী পদোন্নতি পাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের পার্থক্য কেবল এক গ্রেডের। কাজেই পদোন্নতি পাওয়া আমাদের অধিকার। বরং আমরা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছি। এ বঞ্চনা থেকে অবসানের জন্য আমাদের শতভাগ পদোন্নতি দরকার।’
রিট করে পদ ব্লক করার অভিযোগও সঠিক নয় দাবি করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পাওয়ায় কিছু প্রার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত যে নির্দেশনা দেন সেটিই চূড়ান্ত। এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে পদ ব্লক করে রাখার কোনো বিষয় নেই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মীমাংসিত একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। আমরা এ ধরনের কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’