২০২৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শঙ্কা
- ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩৬
২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এর আগে পাঁচটি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে, যা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ২০২৭ সাল থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, যে টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে, সেই সময়সীমার মধ্যেই ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন কারিকুলামের বই দেওয়া সম্ভব হবে। সেজন্য সকল অংশীজনদের নিয়ে নিয়মিত সভা করছেন তারা। ২০১২ ও ২০২২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা শেষ হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির মাধ্যমিক শাখার ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ সুলতানা সাদেক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের যে রোডম্যাপ আছে, আমরা সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’
গত বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পড়াশোনা চলেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতেও তা চালুর কথা ছিল। তবে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে আবারও ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে কার্যত নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে। আগামী বছরও নতুন পাঠ্যবই সেই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যমান বইগুলোর পরিমার্জনের কাজ প্রায় শেষ করেছে এনসিটিবি।
এরপর ২০২৭ সাল থেকে সম্পূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে নতুন পাঠ্যবই দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণি দিয়ে তা শুরু হতে পারে। পরে ধাপে ধাপে অন্য শ্রেণিতেও নতুন বা পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামের বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগে ২০১২ ও ২০২২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা করতে হচ্ছে। এই কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর পর পর্যায়ক্রমে ‘সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস’, ‘অ্যাসেসমেন্ট’, ‘ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি’, ‘নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন’ এবং সবশেষে পাঠ্যবই মুদ্রণ—এ পাঁচ ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বই ছাপা এবং বিতরণ সম্ভব হবে না।
এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সময়সাপেক্ষ এসব ধাপ শেষ করতে গিয়ে ২০২৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাদের মতে, বর্তমান গতিতে এগোতে থাকলে ঘোষিত সময়ের চেয়ে অন্তত এক থেকে দেড় বছর সময় বেশি লাগতে পারে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দুটি কারিকুলাম পর্যালোচনা করলেই কাজ শেষ হবে না। প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধাপগুলো বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হলে সেটি কতটা বাস্তব সম্মত হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাবে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের অগ্রগতি
শিক্ষাবিদরা বলছেন, নতুন কারিকুলামের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞান-কেন্দ্রিক শিক্ষা থেকে দক্ষতা-কেন্দ্রিক শিক্ষায় রূপান্তর। এর জন্য বইয়ে শুধু তথ্য গাদাগাদি না করে বাস্তব জীবনের প্রয়োগভিত্তিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও জরুরি।
তাদের মতে, তাড়াহুড়া করে কারিকুলাম বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হবে। বরং পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে, ধীরে হলেও একটি বাস্তবসম্মত ও আধুনিক কারিকুলাম প্রবর্তন করাই হবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অধিক ফলপ্রসূ।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নূরে আলম সিদ্দিক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম হতে হবে বাস্তবসম্মত। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে। পটপরিবর্তনের পর থেকেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কেবল ব্যবহারিক তুলে ধরলেই হবে না, তত্ত্বীয় বিষয়গুলোও রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। এটি করতে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোনো কিছুর সঙ্গে আপোস করা যাবে না।’