গকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক
- ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২২:৪১
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন সামনে রেখে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবার কোনো মাদকাসক্ত শিক্ষার্থী গকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ জন্য প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট রিপোর্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) গকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘গকসু নির্বাচন আচরণবিধি ২০২৫’ প্রকাশ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক নতুন ও কড়াকড়িভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
নতুন আচরণবিধির ৩ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে, প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত বা স্বীকৃত মেডিকেল সেন্টার থেকে ডোপ টেস্ট করতে হবে এবং রিপোর্ট মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এর অর্থ, গকসু নির্বাচনে মাদকসেবী কারো প্রার্থী হওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। এ পদক্ষেপকে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় এক ‘গেম-চেঞ্জার’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
এদিকে আচরণবিধির ৫(চ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বহিরাগত, সাবেক ছাত্র, অছাত্র বা রাজনৈতিক দলের সদস্যকে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করতে পারবে না। এ ছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও কোনো প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না (৫(ছ))।
অন্যদিকে প্রচারনায় শুধু প্রার্থীর নিজের ছবি ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছবিও ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচনী খরচ নিয়ে বলা হয়েছে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ব্যায় করতে পারবে।
শৃঙ্খলা ভঙ্গে শাস্তি নিয়েও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যাক্তি নির্বাচন পূর্ব সময়ে বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থীতা বাতিল করতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে অনুরোধ করবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নতুন নেতৃত্ব তৈরির এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
বিশেষ করে মাদকমুক্ত, স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের এ উদ্যোগকে অনেকেই বলছেন “দেশের ছাত্র রাজনীতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত।”
আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস সালেহীন নিয়ন বলেন, ‘গকসু নির্বাচনের জন্য প্রণয়নকৃত আচরণবিধি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যথোপযুক্ত। ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নীতি ও আদর্শবান নেতৃত্ব পাওয়া যাবে। এই উদ্যোগ শুধু গকসুতে নয়, দেশের সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচনেই নেওয়া উচিত। একজন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হওয়ার অর্থ– তিনি নৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তার দ্বারা যেকোনো অনৈতিক কাজ সংঘটিত হওয়া সম্ভব। নেতৃত্ব একটি আমানত। শিক্ষার্থীরা কেমন চরিত্রের মানুষের কাছে তাদের আমানত গচ্ছিত রাখতে যাচ্ছে, তা পূর্বেই জেনে নেওয়া অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ। সকলের উচিত এই আচরণবিধি মেনে চলা।’
আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী প্রত্যাশী বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রিদুয়ানুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হতে না দেওয়া ও ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এতে যোগ্য, সৎ ও দ্বায়িত্বশীল নেতৃত্ব নিশ্চিত হবে। বহিরাগত ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাবে। এছাড়াও প্রচারণায় খরচের সীমা, লিফলেট-ব্যানার ও যানবাহন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করবে। প্রার্থিতা বাতিলের শাস্তি নির্বাচনকে স্বচ্ছ, ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ করতে সহায়ক হবে। আমি বিশ্বাস করি, এই আচরণ বিধিমালা অনুসরণ করে সকলের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। তবে, প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ভিপিপ্রার্থী-প্রত্যাশী রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নাসিম খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ধূমপান মুক্ত ক্যাম্পাসে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখছি। নির্বাচনী প্রচারণায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ের সীমাকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এটি যেন স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হয়। কাগজে-কলমে নীতিমালা থাকলেও, তা যদি বাস্তবে প্রয়োগ না হয়, তবে সুস্থ নির্বাচনী প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়তে পারে। কোনো প্রার্থী যাতে রাজনৈতিক বা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ নজরদারি রাখতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে আচরণ বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।’