অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পরও বহাল তবিয়তে বেরোবি কর্মকর্তা রোকন

ড. রোকনুজ্জামান (রোকন)
ড. রোকনুজ্জামান (রোকন) © টিডিসি সম্পাদিত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গবেষণা কর্মকর্তা ড. রোকনুজ্জামানের (রোকন) বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করা, গবেষণা কর্মকর্তা হয়েও গবেষণা না করেও বেতন তোলা, দায়িত্বে গাফিলতি ও বিশ্ববিদ্যালয় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজনীতিতে জড়ানো সহ নানা অভিযোগ উঠলেও এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। 

এ সকল বিষয় গণমাধ্যম প্রকাশিত হওয়ার পর সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এক্সিলেন্স (পূর্ব নাম ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ) এ অভিযান চালিয়ে দুদক এ সকল অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুদকের অভিযানের পরই ইন্সটিটিউটে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে ট্রান্সফার করলেও বহাল তবিয়তে আছেন জিয়া পরিষদের এই নেতা রোকনুজ্জামান।

উপাচার্য তখন এসকল কর্মকর্তাকে ঢাকায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর কথাসহ নানান ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেও কোন পদক্ষেপই নেন নি। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসকল কিছু থামিয়ে রেখেছেন রোকন। এর আগে তিনি সাংবাদিকদের সাথে ও দুর্ব্যবহার করে আলোচনায় আসেন, সে সময় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা তার বিচার দাবি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। অথচ রোকন বর্তমানে ‘জিয়া পরিষদ’-এর রংপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে এখনও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, ড. রোকন নিয়মিতভাবে অফিস করেন না। তার বিরুদ্ধে সময়মতো অফিসে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও সহকর্মীদের প্রতি অশোভন আচরণের অভিযোগও উঠেছে। একাধিক সাংবাদিক সরেজমিনে তদন্ত করতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপর চড়াও হন। তার এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে অনুচিত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মনে করেন অনেকে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গ করে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন বা দায়িত্ব পালনে অনিয়ম করেন, সেটি প্রশাসন কখনই সমর্থন করবে না। কিন্তু বাস্তবে রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে তাকে  নিয়মিত উপাচার্যের রুমে দেখা যায়। গবেষণা কর্মকর্তা হলেও গবেষণায় কোন অবদান নেই এই কর্মকর্তার। ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল  রিসার্চের কোন অনুমোদন না থাকলেও এ কর্মকর্তা বছরের পর বছর বেতন তুলেছেন। যে ইন্সটিটিউটের অনুমোদনই ছিল না সেখানে চাকুরির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, একাধিক অনিয়ম, বিধি লঙ্ঘন ও অশোভন আচরণের প্রমাণ থাকার পরও রোকনের বহাল থাকা দুঃখজনক। তারা অবিলম্বে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া প্রশাসন এসব ব্যাপারে কঠোর না হলে অন্য কর্মকর্তারাও নিয়ম ভঙ্গ করতে উৎসাহী হবেন।

যোগাযোগ করা হলে ড. রোকনুজ্জামান রোকনকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি। 

এ ব্যাপারে দুদক রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাবদারুল বলেন, অভিযান চালানোর পরও বিভিন্ন প্রসেস আছে। প্রসেস অনুসরণ করেই কাজ হয়। আমরা একটি প্রতিবেদন ঢাকায় হেড অফিসে পাঠিয়েছি। সেখান থেকেই পরবর্তী নির্দেশনা আসবে। 

উপাচার্য প্রফেসর ড.শওকাত আলী বলেন, ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে আমি তাদের চয়েজ দিই। সেখানে তিনি থাকেন বাকিরা বিভিন্ন জায়গায় যান। যেহেতু রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাই এখানে সবাইকে গবেষণা করতে হবে। সেখানে তিনজন আছে।’

রোকনুজ্জামান গবেষণার চেয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী রাজনীতি করার সুযোগ নেই। যদি রাজনীতি করতেই হয় চাকরি ছেড়ে করতে হবে।’