ইলন মাস্কের লিংক ছেড়ে সিটাডেলে যোগ দিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর কাইরান কাজী
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর কাইরান কাজী © সংগৃহীত

মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পে মাত্র ১৪ বছর বয়সে যোগ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর কাইরান কাজী। দুই বছর স্টারলিংকে কাজ করার পর এবার যোগ দিচ্ছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটাডেল সিকিউরিটিজে কোয়ান্ট ডেভেলপার হিসেবে। কাইরান বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রকৌশলীদের একজন। সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্নাতক পাস করেন তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ স্নাতক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এটি তার ব্যতিক্রমী বুদ্ধিমত্তা, একাগ্রতা ও চাপের মধ্যে সফল হওয়ার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।এই কিশোর প্রকৌশলী এবার কোয়ান্টিটেটিভ ফাইন্যান্সে তার অনন্য প্রতিভা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা দেখাতে চলেছেন। পেশা জগতে বয়সভিত্তিক পক্ষপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠাই হচ্ছে তার উদ্দেশ্য।

কাইরান কাজীর বাবা মুস্তাহিদ কাজী কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা জুলিয়া কাজী ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করা একজন আর্থিক পেশাজীবী। অর্থাৎ কাইরানের জন্ম এমন একটি পরিবারে, যেখানে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও আর্থিক কৌশল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এ ছাড়া একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন হিসেবে বেড়ে ওঠার কারণে কাইরান কাজী সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষাগত প্রত্যাশার একটি অনন্য মিশ্রণের সঙ্গে শৈশবেই পরিচিত হয়।কাইরান কাজীর শিক্ষাজীবন অন্য সব শিশুর মতো ছিল না। সে তার সহপাঠীদের চেয়ে অনেক আগে কলেজে লেখাপড়া শুরু করে এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে লাস পোসিটাস কলেজ থেকে গণিতে অ্যাসোসিয়েট অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করে। এসবের প্রভাবে ছোটবেলা থেকেই গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠে ছোট্ট কাইরান, যা তার অসাধারণ অর্জনের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। শুধু শিক্ষাগত অর্জনের ক্ষেত্রেই নয়; বরং সেখানে সে নেতৃত্বের গুণাবলিও প্রদর্শন করেছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সে অ্যাসোসিয়েটেড স্টুডেন্ট গভর্নমেন্টের সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। সে ক্যাম্পাসে নানা উদ্যোগে অংশ নিয়েছে এবং ছাত্র–নেতৃত্বাধীন প্রকল্পগুলোর প্রচার করেছে।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে সাহসী এক পদক্ষেপ নেয় কাইরান কাজী। একজন প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেয় মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের স্টারলিংকে। স্টারলিংক প্রকল্পে তার কাজের মধ্যে ছিল জটিল প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে সংস্থাটির বৈশ্বিক ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখা। স্পেসএক্সে কাইরান কাজীর ভূমিকা তাকে প্রযুক্তি খাতে অন্যতম কম বয়সী প্রকৌশলী রূপে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে এবং দেখিয়েছে যে বয়স কম হলেও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ স্তরের কাজ করার কতটা ক্ষমতা সে রাখে। ২০২৫ সালে কাইরান কাজী তার মনোযোগ মহাকাশ প্রকৌশল থেকে আর্থিক প্রযুক্তি খাতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে নিউইয়র্ক নগরভিত্তিক একটি শীর্ষ কোয়ান্টিটেটিভ ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান সিটাডেল সিকিউরিটিজে কোয়ান্ট ডেভেলপার হিসেবে যোগ দেয়। এখানে সে প্রকৌশল ও পরিমাণগত সমস্যা সমাধানের সংযোগস্থলে কাজ করবে এবং ট্রেডার এবং প্রকৌশলীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে বৈশ্বিক ট্রেডিং ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কাজ করবে।

অসাধারণ দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কাইরান কাজীকে বয়সের কারণে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রখ্যাত ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘ভোগ’–এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কাইরান বলেছিল, সে পুরোনো ধ্যানধারণার প্রাপ্তবয়স্কতাবাদ এবং এ ধরনের নিয়োগ সংস্থা থেকে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা প্রতিভার চেয়ে বয়সকে বেশি গুরুত্ব দিত।

সংবাদ সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া