লিঙ্গ বিতর্কে উত্তাল ক্রীড়াঙ্গন, অ্যাথলেট জান্নাতের নারী পরিচয় ফের সন্দেহের মুখে
- ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪৭
জাতীয় অ্যাথলেটিকসে জ্যাভলিন থ্রোয়ার জান্নাত বেগমকে নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। তার লিঙ্গ বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্রীড়াঙ্গন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অভিযোগ, জান্নাতের শরীরে নারীর বৈশিষ্ট্য নেই। লিঙ্গ-পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় স্টেডিয়ামে শুক্রবার (২২ আগস্ট) থেকে শুরু তিন দিনের ১৭তম জাতীয় সামা অ্যাথলেটিকসে নারী ইভেন্টে তাঁকে সুযোগ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। বর্শা নিক্ষেপ, ডিসকাস থ্রো ও শটপুটে জান্নাতের নাম নিবন্ধন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
তবে এ অভিযোগ বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আপাতত আমলে নিচ্ছে না। সেনাবাহিনীর হয়ে জান্নাতকে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে তিনি অংশ নেবেন ‘অন প্রোটেস্ট’। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়েছি। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করবেন। জান্নাত পুরুষ প্রমাণিত হলে পরে তাঁর অর্জিত পদক কেড়ে নেওয়া হবে।’
২০১৯ সালে জান্নাত বিজেএমসিতে খেলেন। প্রথম বছরই জাতীয় অ্যাথলেটিকসে সোনা জেতেন। কিন্তু মেডিকেল টেস্টের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁর সোনা বাতিল করা হয়। তখন তিনি লিঙ্গ পরীক্ষায় পজিটিভ হন বলে ফেডারেশনের দাবি। ২০২০ সালে তিনি নৌবাহিনীতে যোগ দেন। সে বছর মুজিব বর্ষ জাতীয় অ্যাথলেটিকসে মেডিকেল বোর্ডের পরীক্ষায় জান্নাতের শরীরে নারীর বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাঁকে সেবার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
২০২২ সালে এসে তাকে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে খেলতে দেয় তখনকার ফেডারেশন। এ ক্ষেত্রে ফেডারেশনের অবস্থান ছিল দ্বিমুখী, ২০১৯ সালে পদক বাতিল করে ২০২২ সালে আবার খেলতে দেয়। তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় তিনি জ্যাভেলিনে আখেরুন নেসার ২৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে সোনা জেতেন। আখেরুন পরদিন বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে জান্নাতের সোনা জয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লিখিত আপত্তি দেন ফেডারেশনের কাছে। তাঁর দাবি, জান্নাত তৃতীয় লিঙ্গের।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব জান্নাতকে নিয়ে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তখন বলেছিলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত মেয়ে হিসেবেই গণ্য হয়ে এসেছে। তার স্কুল-কলেজের রেকর্ড পত্রসহ সবকিছুতেই তা আছে। এটা ঠিক যে প্রশ্ন ওঠায় আমরা বেশ কিছুদিন তার খেলাটা স্থগিত রেখেছিলাম। তবে সব জায়গায় যোগাযোগ করে এটা আমি বলতে পারি, ওর নারীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অন্যায়। যে কারণে ওর ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিল কি না, হলেও কী ফল, সে ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ৪ বার খেলে ৪টি সোনা জিতেছেন জান্নাত। শটপুটে আছে রুপা। ২০২৪ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় প্রতিযোগিতা হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবারও সেনাবাহিনীর হয়ে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্শা নিক্ষেপে সোনা জেতেন জান্নাত।
এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে নৌবাহিনী বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের নিয়ম উল্লেখ করে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত আপত্তি জানায় ফেডারেশনের কাছে। তাদের দাবি ছিল, লিঙ্গ-পরিচয় অনিশ্চিত থাকলে সংশ্লিষ্ট অ্যাথলেটকে প্রতিযোগিতায় নামতে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে জান্নাতকে নিয়েই প্রথম লিঙ্গ-বিতর্ক তৈরি হলেও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এর নজির আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার দৌড়বিদ ক্যাস্টার সেমেনিয়া ৮০০ মিটারে দুটি অলিম্পিক সোনা জেতার পরও বারবার এ ধরনের বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন।