আওয়ামী লীগের ফেরার ষড়যন্ত্র রুখতে এক গুচ্ছ পরামর্শ

সাবিনা আহমেদ
সাবিনা আহমেদ © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতারা কেমন আছেন আর কি করছেন তা নিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’ একটা খবর আজ প্রকাশ করেছে। খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রায় ১ হাজার ৩০০জন শীর্ষ এবং মাঝারি গোছের নেতা, তাদের যুব এবং ছাত্রলীগের নেতাদের অনেকেই ভারতে এসে কলকাতার নিউ টাউনে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য তারা কলকাতায় বসে রাজনৈতিক পরিকল্পনা করছেন। আওয়ামী লীগ এখনও শক্তিশালী দল। তারা ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ বলে মনে করে এবং তাকে সরিয়ে হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চায়।

ভারতে নির্বাসিতরা শুধু রাজনীতিবিদ নন, সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট, সেনা অফিসার, পুলিশ এবং কূটনীতিকসহ মোট ২ হাজারের বেশি। ভারতে তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক। আওয়ামী লীগের নির্বাসিতরা কলকাতার নিউ টাউনে বড় বড় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন, যেমন, ৩বিএইচকে ফ্ল্যাট মাসে ৩০ হাজার টাকায়। যা তাদের কাছে সস্তা মনে হয়। এখানে চওড়া রাস্তা, শপিং মল, জিম এবং বিমানবন্দর সব অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে।

নির্বাসিত নেতারা বাংলাদেশ থেকে পরিবার এবং সমর্থকদের উপর নির্ভর করেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের (টিবিএস) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভার্চুয়াল পার্টি চালানো খরচ কম হলেও নির্বাসন জীবনের আর্থিক বোঝা সমর্থক এবং পরিবারের সাহায্যে মেটানো হয়। সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কলকাতায় বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন এবং দলীয় মিটিংয়ের খরচ মেটান।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিউ টাউনে থাকেন। আসাদুজ্জামান দলীয় লোকদের সাথে মিটিং করেন, দিল্লিতে যান ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমরা এখানে বিশ্রাম করতে আসিনি, লড়াই করতে এসেছি।’

তাদের অনেকেই আবার ফ্ল্যাট শেয়ার করে (যেমন, দুজন এমপি একসাথে থাকেন) এবং ভাড়া করা জায়গায় মিলিত হয়ে মিটিং করেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তাদের সব তথ্য আছে। তারা মূলত রাজনৈতিক পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং অনলাইনে তাদের সাথে নানা পরিকল্পনা করেন। তারা নির্বাসনকে পরাজয় নয়, কৌশলগত বিরতি মনে করেন। আওয়ামী লীগ এখনও শক্তিশালী দল। 

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিউ টাউনে থাকেন। আসাদুজ্জামান দলীয় লোকদের সাথে মিটিং করেন, দিল্লিতে যান ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমরা এখানে বিশ্রাম করতে আসিনি, লড়াই করতে এসেছি।’

তারা আশাবাদী, নির্বাসনকে দেশপ্রেমের জ্বালানি মনে করেন। কলকাতায় তাদের নির্বাসন পিছু হটা নয়, পুনরায় সংগঠিত হওয়া। তাদের স্থিতিশীল জীবন রাজনৈতিক লড়াই চালাতে সাহায্য করে এবং তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে এখনও বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। আফসোস দেশের অভ্যন্তরের বড় দল আর তাদের নেতারা তা পুরাপুরি উপলব্ধি করতে পারছেন না। 

এবার আসি আমার কথায়। এসব দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের অর্থের মূল উৎস হচ্ছে দুর্নীতি-জাত সম্পত্তি এবং সমর্থক নেটওয়ার্ক। এসব উৎস যতদিন কার্যকর থাকবে, তারা বিদেশে বসে তাদের দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল রাখবে। তাই যেভাবেই হোক তাদের অর্থের উৎসকে আইনি তদন্তের মাধ্যমে উদ্ধার এবং বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালে আওয়ামী লীগের অনলাইন-অনলাইনের সব অ্যাকটিভিটি ব্যান করেছে অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্টের অধীনে। এটি কড়াকড়ি করে প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাসিত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা (যেমন, ৪ শতাধিক মন্ত্রীদের তদন্ত) চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের উপর আইনি বিচার সম্পন্ন না হয়। 

আওয়ামী লীগের উপর ইন্টেলিজেন্স মনিটরিং বাড়াতে হবে। কলকাতার ‘পার্টি অফিস’ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (ফেসবুক, টেলিগ্রাম) মনিটর করতে হবে। DGFI/NSI-কে সক্রিয়ভাবে গোপালগঞ্জের মতো ফেক ‘জেনোসাইড’ প্রোপাগান্ডা রোধ করার সকল কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। ভারত কর্তৃপক্ষের সাপোর্ট ছাড়া ভারতে বসে আওয়ামী নেতার বাংলাদেশ বিরোধী কোন মিটিং এবং কার্যক্রম চালাতে পারে না। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়। তাই ভারত বিরোধী ক্যাম্পেইন দিয়ে ভারতের উপর পাবলিক প্রেশার বাড়ানো তাদের সাপোর্ট বন্ধে বা কমানোয় একটা ইফেক্টিভ কৌশল হতে পারে।

ইউনূস এবং পরবর্তী সরকারের উচিত ডিপ্লোম্যাসি দিয়ে নির্বাসিতদের ভারতসহ অন্য দেশে আশ্রয় বন্ধ করার জন্য সর্বচ্চ চাপ প্রয়োগ করা। UN এবং HRW-এর মতো সংস্থাকে জড়ানো যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত হয়। ভারতীয় ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে কাউন্টার করা। ইউনূস সরকার এসব শুরু করেছে, এবং পরবর্তী সরকারকেও এসব চালিয়ে যেতে হবে। 

পাবলিক এবং মিডিয়াকে সবসময় আওয়ামী লীগের ফলস ন্যারেটিভ কাউন্টার করতে হবে। এসব ব্যাপারে পাবলিককে সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশকে বিভিন্ন ইভেন্টের সিকিউরিটি এবং কমিউনিটি ভিজিল্যান্স বাড়াতে হবে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের মতো ইনস্টিটিউশনকে শক্তিশালী করাটা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন সাসপেন্ড থাকে। জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটকে জিইয়ে রাখার বিকল্প নাই, যাতে পুনরায় অস্থিতিশীলতা না হয়।

আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র রুখতে আইনি-ডিপ্লোম্যাটিক কম্বিনেশন এবং পাবলিক অ্যাওয়ারনেস জরুরি। অর্থের উৎসগুলো দুর্নীতি-কেন্দ্রিক অর্থের উৎসগুলোকে দেশের কাজে পুনরুদ্ধারের বিকল্প নাই। বাংলাদেশের সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোককে সতর্ক থেকে কাজ করতে হবে, যাতে জাতীয় ঐক্য বজায় থাকে। যাদেরকে দেখবেন ঐক্যের বিরুদ্ধে বয়ান দিচ্ছে বা কার্যক্রম করছে, হয় তারা দেশবিরোধী, পলাতক আওয়ামী নেতাদের দোসর, নাহয় তাদের কোনও দূরদৃষ্টি নাই, মহা আহাম্মক, আর টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া স্বার্থপর লোকজন । যেটাই হোক, তাদের পরিত্যাগ করা দেশের ঐক্যের জন্য এই মুহূর্তে জরুরি।

সাবিনা আহমেদ: মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বিশ্লেষক