সনদের মেয়াদ আগের মতোই, পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে নেওয়ার চিন্তা

এনটিআরসিএ
এনটিআরসিএ © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে পরিবর্তন হয়নি সনদের মেয়াদের বিষয়টি। আগের মতো একবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উত্তীর্ণ হলে তিনবার আবেদনের সুযোগ পাবেন। ইতোমধ্যে এ বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি প্রকাশ করা হবে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন বিধিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিগগিরই এ বিধি প্রকাশ করা হবে।’

২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে এনটিআরসিএ। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর থেকে ছয়টি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) পর্যন্ত ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৫ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করল এনটিআরসিএ।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫ এ অনেক পরিবর্তন আনা হলেও পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে সেটি চূড়ান্ত করা হয়নি। বিধিমালায় বলা হয়েছে বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। বাছাই পদ্ধতি কেমন হবে সেটি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) বোর্ড সভায় চূড়ান্ত হবে। পরীক্ষা দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। আগের মতো তিন ধাপে পরীক্ষা হবে না।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাছাই পরীক্ষায় এমসিকিউ এবং লিখিত দুটিই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আদলে কিছু অংশ এমসিকিউ এবং কিছু অংশ লিখিত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে এনটিআরসিএর। তবে কত নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এনটিআরসিএর একজন বোর্ড সদস্য দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেলে প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করানো হবে। পরবর্তী মৌখিক পরীক্ষাতেও পৃথকভাবে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। দুই ধাপে পৃথকভাবে উত্তীর্ণরাই চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবেন। পরবর্তীতে প্রার্থীদের একটি সনদ দেওয়া হতে পারে। এই সনদের মাধ্যমে বয়স থাকা সাপেক্ষে একজন প্রার্থী তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন। পরীক্ষা পদ্ধতিসহ আরও কিছু বিষয় বোর্ড সভা করে চূড়ান্ত করা হবে।’

শূন্যপদের দ্বিগুণ প্রার্থীকে ভাইভায় ডাকা হবে
সংশোধীত শিক্ষক নিবন্ধন বিধিমালায় শূন্য পদের সংখ্যার দ্বিগুণ প্রার্থীকে ভাইভার জন্য ডাকা হবে। অর্থাৎ শূন্য পদের সংখ্যা ৫০ হাজার হলে ভাইভা এক লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন। শুধু ভাইভা নয়; চূড়ান্ত ফলও শূন্য পদের সংখ্যা অনুযায়ী দেওয়া হবে। যতগুলো পদ শূন্য থাকবে তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে পাস করানো হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব জানান, শূন্য পদের সংখ্যার দ্বিগুণ প্রার্থীকে ভাইভার জন্য ডাকবে এনটিআরসিএ। এ ছাড়া যতগুলো পদ তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে পাস করানো হবে। অর্থাৎ পদের সংখ্যা এক লাখ হলে উত্তীর্ণ হবে এক লাখ ২০ হাজার প্রার্থী।

বয়স গণনা হবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে
প্রকাশ হতে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে প্রার্থীদের বয়স গণনা করতে হবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ)। গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় পৃথকভাবে বয়স গণনা করা যাবে না। এর ফলে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের বাধা উঠে যাচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মো. হেলালুজ্জামান সরকার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘একজন প্রার্থীর নিবন্ধন সনদ অর্জন করতে গিয়ে কয়েক বছর লেগে যায়। যার ফলে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সময় তার বয়স থাকে না। তিনি পরবর্তীতে আবেদনের সুযোগও পান না। এজন্য নতুন বিধিমালায় শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় প্রার্থীর বয়স নির্ধারণ করা হবে। গণবিজ্ঞপ্তির সময় আলাদা করে বয়স হিসেব করা হবে না।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিধিমালায় অনেকে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। আবার অনেক বিষয় আমাদের বোর্ড সভায় চূড়ান্ত হবে। বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারির বোর্ড সভায় আলোচনা করে বাছাই পদ্ধতির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।