কেমন গকসু চায় শিক্ষার্থীরা?
- ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৫৪
দীর্ঘ ৭ বছর পর সচল হচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু)। জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় গকসু। ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পরেছে নির্বাচনের আমেজ। তবে, আসন্ন নির্বাচনের পরে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রাচীর গড়ে তোলার এ সংসদকে কেমন রূপে দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা? গকসু নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার কথা লিখেছেন শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী মোজাহিদুল ইসলাম নিরব।
'গকসু হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের কণ্ঠ'
সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাই গকসু হোক শিক্ষার্থীদের ভরসার জায়গা। দীর্ঘদিন পর গকসু সচল হচ্ছে, আশাকরি গকসুর সান্নিধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন এবং ক্ষমতার সঠিক ব্যবহারই পারে শিক্ষার্থীদের আশা পূরণ ও আগামীর সুন্দর গণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে নিঃস্বার্থভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে গকসুতে এমন নেতৃত্ব আশা করি। শিক্ষার্থীরাও ভোটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বই বেছে নিবে। সর্বাবস্থায় সকল ধরনের সমস্যা সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নির্ভীকভাবে কাজ করার মন মানসিকতা রাখে এমন নেতৃত্ব উন্মোচিত হোক। গকসুর মাধ্যমে পরিবর্তন আসুক সকল অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে। একটি নতুন সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তৈরি হোক ছাত্র সংসদের হাত ধরে।
—মো. মারুফ, ৫ম সেমিস্টার, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস অনুষদ।
'গকসু হোক নির্দলীয়, নিরপেক্ষ'
গকসু নির্বাচন গবি শিক্ষার্থীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত এবং গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় পর গকসু পাচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। শিক্ষার্থীদের সকল অধিকার এবং দাবি আদায়ে গকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বর্তমানে যে সমস্যা গুলো লক্ষ করা যায় তারমধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা কম, প্রয়োজনীয় বইয়ের অভাবও রয়েছে। এছাড়া ক্যান্টিন, ট্রান্সপোর্টসহ নানা বিষয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। গকসু শিক্ষার্থীদের এমন সমস্যা নিরসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশাকরি। নির্দলীয় এবং যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে গকসু হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। গকসু যেন শুধু নির্বাচনেই সীমাবদ্ধ না থাকে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও সমাধান হোক গকসুর মূল উদ্দেশ্য। গকসু হোক নির্দলীয় নিরপেক্ষ।
—জান্নাতুল ফেরদৌস লামিশা, ২য় সেমিস্টার, বাংলা বিভাগ।
'প্রতিশ্রুতি নয়, প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ'
নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চা, নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হোক গকসু। আশাকরি, প্রশাসন নিরাপত্তা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। নির্বাচনে এমন নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে, যারা কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে। নতুন নেতৃত্বে গুণাবলি হিসেবে সৎ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক বৈশিষ্ট্য আবশ্যক এবং রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে যেয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করবে। আসুন আমরা সবাই সৎ, স্বচ্ছ এবং উদ্দীপনাময় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করি শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতের পরিবর্তনের পথে আলোকবর্তিকা।
—মো. মেহেদী হাসান, ৪র্থ সেমিস্টার, ইইই বিভাগ।
'গকসু হোক শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় বিশ্বস্ত সহযোগী'
শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে গকসু শিক্ষার্থীদের শক্তি হিসেবে গড়ে উঠুক এই প্রত্যাশা করি। গকসু হোক শিক্ষার্থীবান্ধব ও সহজে যোগাযোগ যোগ্য যাতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ এবং সংকটের কথা উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা যায় গকসুর মাধ্যমে। গকসুকে সফল এবং ইতিবাচক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার। শিক্ষার্থীদের নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব। শুধু বর্তমান সমস্যা নয়, ভবিষ্যতের উন্নয়নের পরিকল্পনাও রাখতে হবে। নতুন নেতৃত্বে সংকটময় সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার দৃঢ়ত থাকতে হবে। গকসুর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, পরিবহন, ইন্টারনেটে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশাকরি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ার দক্ষতা বাড়াতেও গকসু ভূমিকা রাখবে বলে আশাকরি। সর্বোপরি, যোগ্য নেতৃত্বে গকসু হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের আশার আলো, অধিকার রক্ষার বিশ্বস্ত সহযোগী।
— এইচ. এম. কামরুজ্জামান, ৩য় সেমিস্টার, ফার্মেসী বিভাগ।
'গকসুকে সফল করতে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব'
গকসু হোক এমন একটি শিক্ষার্থীবান্ধব সংসদ যা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য সর্বদা সচেষ্ট। আমরা এমন গকসু প্রত্যাশা করি, যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগীতা-সহমর্মিতা ও শিক্ষার্থীদের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে যেকোনো প্রতিকূলতার সঠিক সমাধান নিশ্চিত করা হবে। গকসুকে সফল করতে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। আসন্ন নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার জন্য সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও নিরপেক্ষতার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্ব আসবে বলে আশা করি। নতুন নেতৃত্বে প্রতিফলিত হোক কর্মঠ মানসিকতা, শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্টভাষী, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বলিয়ান ও সবাইকে নিয়ে ঐক্যের বন্ধন শক্তিশালী করার প্রত্যয়। সঠিক নেতৃত্বে গকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্রকৃত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায় ও ঐক্যের পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
—মারুফ হাসান, ২য় সেমিস্টার, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগ।
'গকসু হোক সমাধান ও সুযোগের সক্রিয় মঞ্চ'
একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়তই ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট এবং সম্ভাবনা উভয়ই উপলব্ধি করছি। গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নেপথ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো গকসু। আমার প্রত্যাশা, গকসু হবে শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যার সমাধান ও সুযোগ তৈরির একটি সক্রিয় মঞ্চ। আসন্ন নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে তারা যেন ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও ছাত্রকল্যাণকে অগ্রাধিকার এবং অ্যাকাডেমিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করে। যোগ্য নেতৃত্ব সংগঠনকে সমৃদ্ধির পথ দেখায় তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করা। সর্বোপরি আশাকরি, গকসু শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ, ন্যায়সঙ্গত ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলবে।
—আফসানা মিমি সাদিয়া, ১ম সেমিস্টার, আইন বিভাগ ।