ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব
- ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৭
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষার মান, গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে ভাবনাসহ নানা বিষয়ে নানা বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটির নিয়েছেন ইরফান এইচ সায়েম-
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইস্টার্ন হলো কেন? এর বিশেষত্ব কী?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: প্রথমত, ‘Eastern’ শব্দটি আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানকে বোঝায়। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত, এবং এই নামের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে; দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতাগণ এমন একটি নাম বেছে নিতে চেয়েছেন, যা পূর্ব এবং পশ্চিমের মাঝে জ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির সেতুবন্ধন ঘটাতে সক্ষম; তৃতীয়ত, আজকের পৃথিবীতে বেশিরভাগ উন্নত, খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমা বিশ্বে (Western countries) অবস্থিত – যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি। কিন্তু "Eastern University" নামটি একটি দৃঢ় বার্তা দেয় যে, পূর্বেও একটি উন্নত ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব; চতুর্থত, আন্তর্জাতিকীকরণ ও সহজ পরিচিতির লক্ষ্যেও ইংরেজি নামটি বেছে নেওয়া হয়েছে, যা বিদেশি শিক্ষার্থী ও গ্লোবাল একাডেমিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার জন্য সহায়ক।
অবশেষে বলা যায়, Eastern University নামটি শুধু ভৌগোলিক অবস্থান নয়, বরং পূর্বের জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে বিশ্বমানে পৌঁছানোর অঙ্গীকারের প্রতীক। পশ্চিমে যত উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় থাকুক না কেন, আমরা বিশ্বাস করি—পূর্বেও মানসম্পন্ন, উদ্ভাবনী ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব - যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্তা তথা উপাচার্য হিসেবে প্রাথমিকভাবে কোন বিষয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: প্রাথমিকভাবে আমি তিনটি বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি: শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কারিকুলামের আধুনিকায়ন; গবেষণা ও উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি; শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার প্রস্তুতি ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট।
আমরা চাচ্ছি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রতিটি গ্র্যাজুয়েট শুধু ভালো সিজিপিএ নয়, বরং বাস্তব জ্ঞান ও কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠুক।
ভর্তিচ্ছুরা উচ্চশিক্ষার জন্য কেন এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেবে?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: আমরা বিশ্বাস করি, উচ্চশিক্ষা যেন কেবল বিত্তবানদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে। এখানে ছাত্রছাত্রীরা মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে তুলনামূলকভাবে অনেক কম খরচে। আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষক, আপডেটেড কারিকুলাম, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম মিলিয়ে আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলেছি। টিচিং, একাডেমিক রিসার্চ, ও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট -এই তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আপনাদের ওয়েভার পলিসি কী?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: আমাদের ওয়েভার ও স্কলারশিপ পলিসি বেশ উদার। এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো ফলাফল, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, মেয়েদের জন্য বিশেষ ওয়েভারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ওয়েভার প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রতি সেমিস্টারে ভালো ফলাফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ পায়। আমরা চাই, কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী যেন আর্থিক কারণে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।
আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধাগুলো স্বল্প পরিসরে বলুন?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুন্দর পরিবেশে পড়ালেখা করার সুযোগ, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষকমণ্ডলীর পাঠদান, ফ্রি ট্রান্সপোর্ট সুবিধা, প্রশস্ত ও আধুনিক লাইব্রেরি, উন্নতমানের ল্যাব ফ্যাসিলিটি, ১০০% পর্যন্ত বিশেষ ওয়েভার পলিসি, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য পৃথক হোস্টেল ব্যবস্থা, ২৫ টি ক্লাব - যেখানে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে থাকেন দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ, ইনডোর - আউটডোর খেলার ব্যবস্থা, শিক্ষা সফর, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিটসহ নানান সুবিধাদি রয়েছে।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে নিশ্চয়ই সহশিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। এই ক্ষেত্রে দেশি ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীদের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাই।
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও সহশিক্ষা বিদ্যমান। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে ইভটিজিং ও মাদকের ন্যায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত করা হয়। ডিবেট, মডেল হান্ট, প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, স্টার্ট-আপ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান -সবক্ষেত্রেই আমাদের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে, কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ করছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে একমাত্র দল হিসেবে আমরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত মনরো ই. প্রাইস মিডিয়া ল’ ইন্টারন্যাশনাল মুট কোর্ট কম্পিটিশন ২০২৪-২৫ এর আন্তর্জাতিক রাউন্ডে কোয়ালিফাই করেছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বকাপ মুট’ বলে খ্যাত ফিলিপ সি. জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল’ মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছে। এরমধ্যে ১ জন ইতোমধ্যে জাপানের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরিপ্রাপ্ত হয়েছে।
ইস্টার্ন থেকে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি পাওয়ার হার কেমন? কোনো পরিসংখ্যান আছে কিনা; চাকরি পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কেমন?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: আমাদের ক্যারিয়ার সার্ভিস সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গ্র্যাজুয়েশনের পর ৬ মাসের মধ্যে প্রায় ৭৫-৮০% শিক্ষার্থী কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত হয়। পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংক, আইটি ফার্ম ও আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত রয়েছে। অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের শিক্ষার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ক্যারিয়ার ফেয়ার, ইন্টার্নশিপ লিংকেজ এবং ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত কাজ করছে।
উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন উঠে। কম-বেশি আগেও ছিল। তবে বর্তমানে শিক্ষাজীবন শেষ করা গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা - যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন? গ্র্যাজুয়েটদের কোন ঘাটতিগুলো আপনাকে বেশি ভাবায়?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমি মনে করি, তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ক্রিটিক্যাল থিংকিং, কমিউনিকেশন স্কিল এবং প্রবলেম সলভিং -এর মতো সফট স্কিলের ঘাটতি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। শুধু সিজিপিএ নয়, বাস্তব কাজের দক্ষতা অর্জনেও শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্যই আমরা স্কিল-বেইজড ট্রেনিং, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট এবং প্রেজেন্টেশন ক্লাস বাড়িয়েছি। আমাদের টার্গেট, শিক্ষার্থীরা যেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।
একবিংশ শতাব্দীর বড় প্রশ্ন ‘একাডেমিক্যালি বেস্ট পারফরম্যান্স’ নাকি ‘আউটস্ট্যান্ডিং স্কিল’? আপনি কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: দুটির মধ্যে ভারসাম্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের বাস্তবতায় আউটস্ট্যান্ডিং স্কিল না থাকলে কেবল একাডেমিক পারফরম্যান্স দিয়ে সফল হওয়া কঠিন। আমরা এখন এমন যুগে আছি যেখানে একজন গ্র্যাজুয়েটের হার্ড স্কিলের পাশাপাশি সফ্ট স্কিল, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা, এবং নেতৃত্বদানে সক্ষমতা -এসবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক এক্সিল্যান্স এবং প্রাক্টিক্যাল স্কিল উভয়টি সমন্বয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
আগামী এক দশক পর ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে কোথায় দেখতে চান?
প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী: আমি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে দেখতে চাই একটি আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে, যেখান থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু চাকুরিই খুঁজবে না, বরং অনেকেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করবে। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে আধুনিক জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক গবেষণা কাঠামো গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো, এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আমি বিশ্বাস করি সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও শিক্ষকমন্ডলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা পেলে আগামী এক দশকে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।